environment type – পরিবেশের প্রাকৃতিক, কৃত্রিম বা মানুষ্য সৃষ্ট, এবং সামাজিক বিভাগ গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাকে আমরা সাধারণভাবে পরিবেশ বলে থাকি। অন্যরকম ভাবে বললে বলা যায়, কোন জীবের বেঁচে থাকার জন্য তার চারিপাশের সজীব ও জড়ো উপাদানের সমষ্টি কেউ একত্রে পরিবেশ বলা যেতে পারে।

জিপ তার জীবনধারণের জন্য পরিবেশ থেকেই বিভিন্ন উপাদানকে সংগ্রহ করে থাকে। জীবের অন্তক্রিয়া বিক্রিয়ার জন্য পরিবেশের বিভিন্নতা একান্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, কারণ বিভিন্ন জীবের জীবনধারণের ভৌত রাসায়নিক চাহিদা আলাদা হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের চাহিদার ভিত্তিতে বা জীব পরিবেশের পারস্পরিক আন্ত সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিবেশের প্রকারও বিভিন্ন হয়ে থাকে।

প্রাথমিকভাবে পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ ( 2 types of environment ) করা যেতে পারে, একটি ভাগ হলো দেহের বা শরীরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা সাধারণভাবে আমাদের চারপাশের বাতাস, আলো, মাটি, আকাশ, জল, পশু, পাখি, গাছপালা ও সামাজিক অবস্থা ইত্যাদিকে বলা যেতে পারে। এবং দ্বিতীয় প্রকার পরিবেশটি হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির অর্থাৎ এটি শরীরের পারপাসিক অবস্থান নয়, শরীরের অভ্যন্তরস্ত অবস্থা বা দেহাভ্যন্তরীণ পরিবেশ। যদিও এই দেহভ্যন্তরীণ পরিবেশের দেহের নিজস্ব পরিবেশ তবে এই পরিবেশের সাথে পারিপার্শ্বিক বা বাহ্যিক পরিবেশের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে গড়ে ওঠে মানুষের জীবনযাত্রা।

নিম্নে পরিবেশের শ্রেণীবিভাগ ( environment type ) করে, প্রত্যেকটি বিভাগের উপাদান গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

A) অভ্যন্তরীণ পরিবেশ

যেকোনো জিভের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই দেহাভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও তার নিয়ন্ত্রণ প্রণালী জেসা খাই পঠন-পাঠন করা হয় তাকে শরীরবিদ্যা বলা হয়ে থাকে। উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে একে উদ্ভিদ শরীর বিদ্যা এবং প্রাণীদের ক্ষেত্রে কে প্রাণীর শরীরবিদ্যা বলা হয়। যখন শুধুমাত্র মানুষের শরীরের অন্ধ পরিবেশ যে শাখায় পর্যালোচনা করা হয় তাকে বলা হয় মানব শরীর বিদ্যা বা হিউম্যান সাইকোলজি।

এই শাখায় সমগ্র দেহের ভৌত রাসায়নিক পরিবেশ যেমন হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব, এনজাইম, হরমোন, অম্ল ক্ষারের সাম্যতা, রক্তের অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা, উষ্ণতা ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণ ও তার বিফলে কি প্রতিক্রিয়া হয় তা পঠন-পাঠন করা হয়। তাছাড়া আন্ত কোষীয় পরিবেশ, দেহ গঠনতন্ত্রগত পরিবেশ যেমন- রেচন জননতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, নার্ভতন্ত্র, পাচনতন্ত্র ইত্যাদি এর মধ্যে উল্লেখ করা হয়। এই দেহভান্তরের পরিবেশের নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী দেহের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও তার সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

B) বাহ্যিক পরিবেশ বা দেহের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ

বাহ্যিক পরিবেশের বেশিরভাগ অংশই প্রচলিত পরিবেশ বিদ্যায় পঠন-পাঠন করা হয়। পরিবেশের আঁকার অনুযায়ী বৃহৎ পরিবেশ এবং ক্ষুদ্র পরিবেশ বলা হয়। যেহেতু মানুষের বিস্তার বেশ বড় তাই দ্বিতীয় প্রকার পরিবেশটি তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না। মানুষ তার পরিবেশের মধ্যে যেভাবেই থাকুক না কেন, সেই স্থানের সাপেক্ষে সে অবিচ্ছেদ্যভাবে ভৌত রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্ত। তার শরীরের অতি নিকটবর্তী স্থান থেকে দূরবর্তী সমস্ত অংশই তারা প্রাকৃতিক পরিবেশের অঙ্গ বিশেষত যাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারিত ক্ষমতা আছে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পঠন-পাঠন করা হয়। এই উপাদানের মধ্যে একটি হল সজীব উপাদান এবং অপরটি জড়ো উপাদান। যদিও জীব-বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হলো সজীব উপাদান এবং পদার্থ ও রসায়নবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হলো জড় উপাদান তবে বিষয়বস্তুভিত্তিক গঠন-পাঠনের মধ্য থেকে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি হয় না, তাই এর পারস্পরিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমেই জীবদেহের তথা মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ পরিবেশকে যে নিয়ন্ত্রণ করে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভের জন্যই দরকার পরিবেশ বিজ্ঞান সম্বন্ধে পঠন পাঠন ও গণ সচেতনতা।

∆ প্রাকৃতিক পরিবেশ ( natural environment )

✓ প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন জড় উপাদান

প্রাকৃতিক পরিবেশের জড় উপাদান কতগুলি অংশ নিয়ে গঠিত জানিনা উল্লেখ করা হলো।

১) ভৌত উপাদান – বায়বীয় গ্যাসের ঘনত্ব ও তার চাপ (বায়ুর চাপ), চৌম্বক তত্ত্ব, সৌর বিকিরণ, মাটি, বায়ু, উষ্ণতা ইত্যাদি ভৌত উপাদান নিয়ে গঠিত।

২) জলবায়ু সংক্রান্ত উপাদান – জল ও জলপ্রবাহ, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি উপাদান সমূহ।

৩) রাসায়নিক উপাদান সমূহ – জল, মাটি ও বাতাসে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, দ্রবীভূত বিভিন্ন গ্যাস, অম্লত্ব, ক্ষারত্ব, বিভিন্ন মূলক, বিভিন্ন যৌগিক ও মৌলিক ধাতব পদার্থ সমূহ যেমন – সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সালফার ইত্যাদি।

✓ প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন সজীব উপাদান

পরিবেশে উপস্থিত সমস্ত সজীব উপাদান সম্পর্কে নিচের অংশে পঠন পাঠন করা হল। সমস্ত জীবগোষ্ঠীকে নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রধান ভাগে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ণনা করা হল

১) জীবাণু বা মাইক্রোবাস – এদের খালি চোখে দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এদের দেখতে হয়। জীবাণু গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক উল্লেখযোগ্য। জীবাণুর কিছু কিছু প্রজাতি মানুষের নানা উপকার করে থাকে। এই ধরনের জীবাণুকে বলা হয় উপকারী জীবাণু। তবে বেশ কিছু প্রকার প্রজাতি মানুষের সরাসরি স্বাস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। যারা এই প্রকার মানুষের বিভিন্ন প্রকার রোগ উপসর্গের জন্য দায়ী তাদেরকে অপকারী জীবাণু বলা হয়।

২) উদ্ভিদ – সমস্ত সবুজ বঙ্গক যুক্ত জীবই এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এরাই কেবলমাত্র আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। প্রাণচঞ্চল পৃথিবীর মূল শক্তির উৎস সূর্য হলেও প্রাণীদের গ্রহণযোগ্য শক্তির উৎস হল এই উদ্ভিদ। সমস্ত প্রাণীকুল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য এই নির্ভরশীলতা কিন্তু একমুখী নয়, প্রাণীবিহীন পৃথিবীতে কেবল উদ্ভিদকুল বাঁচতে পারবে না। কারণ হলো প্রাণীর শ্বাসকার্যের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড উদ্ভিদের আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে যে পদার্থ উৎপন্ন হয় তা খাদ্য রূপে ব্যবহার করে থাকে উদ্ভিদ।

পরাগরেনুর মিলন, বীজের বিস্তারে ও প্রাণীর ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং মাইক্রোবাস বা জীবাণু পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকে। জীবের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও তার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবেশের প্রভাব উদ্ভিদ পরিবেশ বিদ্যার মূল বিষয়বস্তু।

৩) মানুষ্যেতর প্রাণী – একেবারে এককোষী আদ্যপ্রাণী থেকে শুরু করে মানবজাতির খুব নিকটবর্তী প্রাণী এর আওতায় পড়ে। মানুষ্যেতর প্রাণী সম্বন্ধে জ্ঞান চর্চা করা হয় প্রাণিবিদ্যা শাখায়। এখানে এককোষী আদ্যপ্রাণী অ্যামিবা, অ্যাবামেসিয়াম, চিত্রেলো প্রাণী স্পঞ্জ থেকে শুরু করে মালাকার প্রাণী, কৃমি জাতীয় প্রাণী, অঙ্গুরীমাল প্রাণী, সন্ধিপদ প্রাণী, শামুক, কন্টকতত্ত্ব, নোটকর্ডযুক্ত প্রাণী, ও মেরুদন্ডী প্রাণীর পঠন-পাঠন করা হয়।

বলাবাহুল্য যেহেতু এইসব প্রাণী তাদের নিজ নিজ পরিবেশে অবস্থান করে, এবং জৈব ও অজৈব পরিবেশের উপর নির্ভরশীল তাই এদের পঠন পাঠন তাদের জীবনধারণে স্বতন্ত্র পরিবেশ পাঠ অবশ্যম্ভাবী। এইসব প্রাণীর স্বভাব ও বাসস্থান, জীবন চক্র, শরীরবৃত্তীয়, জনন ও বংশবিস্তার তথা তাদের জীবন সংগ্রামের অধিকাংশ পরিবেশ সম্পর্কিত হওয়ায় প্রাণী পরিবেশ প্রাণিবিদ্যা শাখায় এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়রূপে বিবেচিত হয়।

৪) মানুষ – মানুষ সমস্ত প্রাণীকুলের মধ্যে পড়লেও যেহেতু সে সর্বাধিক বুদ্ধিমান, ও সমস্ত দিক দিয়ে বিবেচনায় শেষ স্বতন্ত্র তাই মানুষকে বা তার সমস্ত জৈবনিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া বিশেষভাবে পঠন-পাঠন করা হয় একে বলা হয় মানব শরীরবিদ্যা। বলাবাহুল্য এই শাখায় মানুষের শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণ পরিবেশকে প্রাধান্য দেয়া হয়। পরিবেশ বিদ্যায় মানুষকে স্বতন্ত্র স্থান দেওয়া হয় কারণ মানুষ তার পরিবেশকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিত করে এবং এই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের কুফল হলো পরিবেশ দূষণ।

∆ কৃত্রিম মানুষসৃষ্ট পরিবেশ

১) গ্রাম্য পরিবেশ – সবুজ গাছে ঘেরা বিস্তীর্ণ কৃষি ক্ষেত্র সহ ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট জলাশয় যেমন পুকুর খাল ও বিল যুক্ত হগলা বা ঘরের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর গ্রাম্য পরিবেশের আদর্শ চিত্র। আর্থিক পরিকাঠামোর উপর ভিত্তি করে এই পরিবেশের পরিকাঠামোর পরিবর্তন হয়। গ্রামের সম্পদের স্বচ্ছতা থাকলে গ্রামের পরিবেশ ও একটু পরিবর্তিত হয়। ঘরের ছাউনি ঘরের পরিবর্তে হয় টালি বা টিনের বা এসবেসটাস , পানীয় জলের জন্য নলকূপ। কৃষির সঙ্গে থাকে ছোট ছোট কুটির শিল্প। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলি প্রয়োজন যেমন খাদ্য, বাসস্থান ও পানীয় জল তা অধিকাংশ গ্রামেই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত।

২) শহর নগর পরিবেশ – কৃষি, শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে শুরু হয় নগরায়ন। ফলে গড়ে ওঠে নতুন নতুন শহর ও নগর। অপেক্ষাগৃত আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য মানুষ এইসব জায়গায় এসে বসবাস করতে শুরু করে। ক্রমশ জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধীরে ধীরে কৃত্রিম পরিবেশে রূপান্তরিত হয়। এই পরিবেশে থাকে পাকা বাড়ি, গগনচুম্বী অট্টালিকা, নির্মিত হয় সড়ক পথ, রেল পথ, জল সরবরাহের লাইন, প্রণালী, এমনকি দূর সংযোগের জন্য বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। শহরের সমস্ত স্থাবর সম্পত্তি যেমন ঘরবাড়ি, পথঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা যাই হোক না কেন, সমস্তই একটি নির্দিষ্ট পরিকাঠামো অনুযায়ী অনুমতিক্রমে তৈরি হয়। অনুমতি দেয় নগর পালিকা। উপরিউক্ত সুযোগ-সুবিধা উন্নতিকল্পে ধীরে ধীরে ওই স্থানের গ্রাম্য পরিবেশ নগর পরিকাঠাময় রূপান্তরিত হয়।

∆ সামাজিক পরিবেশ

বিভিন্ন গোষ্ঠীর ও প্রতিষ্ঠানের জটিল গঠনের দ্বারা তৈরি হয় সমাজ। যেকোনো সমাজের মধ্যে এই সব গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের সুষম আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বলা হয় সামাজিক পরিবেশ।। সামাজিক পরিবেশে গোষ্ঠী অনুযায়ী কাজকর্ম বা কর্তব্য ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। আদর্শ সামাজিক প্রাণীর উদাহরণ বলতে হলে মৌমাছি বা পিঁপড়ের সামাজিক জীবনের কথা উল্লেখ করতে হয়। মানুষের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক, রাজনীতি, মূল্যবোধ, অর্থনীতি, রীতিনীতি এবং ধর্মীয় আচরণও এই সামাজিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেহেতু উপযুক্ত ক্ষেত্র গুলিতে ব্যক্তিগত আশাকাঙ্ক্ষার সূত্র থাকে ফলে মানুষ আদর্শ সামাজিক জীবনযাত্রা থেকে পথভ্রষ্ট হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *