biodiversity conservation – জীব বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মানুষ সমস্ত প্রাণী গোষ্ঠীর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র। সমগ্র প্রাণী রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র বৃহত্তর মস্তিষ্কের অধিকারী বলে মানুষের বুদ্ধি বৃদ্ধির প্রসার ও অনেক বেশি। শুধু তাই নয় মানুষের জীবনযাপনের আচার-ব্যবহার, ধ্যান ধারণা, দেহ গঠন, কার্যক্ষমতা, ধর্ম ও সংস্কৃতি, খাদ্য এবং বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রকৃতি, সামাজিক পরিকাঠামো এবং তাদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের রীতিনীতি সম্পূর্ণভাবে অন্যান্য প্রাণীগোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়ে থাকে।

এগুলির সঙ্গে যেখানে মানুষের স্বার্থ বা আর্থিক যোগসূত্র বর্তমান রয়েছে, সেখানে মানুষ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে প্রভুত্ব করার বাসনা সূত্রপাত হয়। হাজার হাজার বছর আগে মানুষ বনের পশুকে গৃহপালিত পশু হিসেবে পোস মানিয়েছে। তাদের নানাভাবে মানুষের উন্নতির কাজে লাগিয়েছে, অর্থাৎ সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করেছে। অন্যান্য প্রাণীদের মত প্রকৃতি থেকে আহরিত করে তাদের প্রতিপালন কিংবা মানুষের আদিম সভ্যতায় খাদ্য রূপে পশু শিকার ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

পশুপাখি, জীবজন্তুর ওপর যখন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য আরোপিত হতে শুরু করল, তখন থেকে মানুষ বনের জীব জন্তুকে বা পশুকে অস্বাভাবিক ভাবে স্বীকার করতে শুরু করল। জনবসতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একদিকে যেমন পশু পাখির এবং জীবজন্তুর স্বাভাবিক বাসস্থান ও বনজঙ্গল কেটে ফেলতে লাগলো, অপরদিকে বাড়তি যানবাহন, শিল্প ও কলকারখানা দূষিত পদার্থ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কে সংকটময় করতে লাগল।

ফলে ক্রমে তাদের জীবন যাত্রার ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়াই, স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি কমতে থাকি যা মানুষের এর আগে দীর্ঘকাল দৃষ্টিগোচরে আসেনি। প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারাই কিংবা জীবন সংগ্রামে হেরে গিয়ে একাধিক জীবের অবলুপ্তি ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের দ্বারা তৈরি দূষণে, অস্বাভাবিক পরিবেশ এবং অত্যাধিক শিকারে পৃথিবীতে বিভিন্ন জীবের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি অবলুপ্তির ঘটনা অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

যত খুশি স্বীকার করার জন্য প্রকৃতিতে অফুরন্ত জীবের যোগান নেই, তা ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পেরেছে। বলা বাহুল্য, জীবের এই সংখ্যা হ্রাসের কারণ সন্ধানের সিদ্ধান্তে আসার আগেই কয়েক হাজার জীব পৃথিবী থেকে চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার সাধারণ মানুষের মনে এই ধারণা ছিল যে পৃথিবীতে মানুষের অধিপত্যের জন্য মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার সর্বাগ্রে।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে যে জীবজগতের যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদ মানুষের খাদ্য ও বস্ত্র ও বাসস্থানের সঙ্গে জড়িত শুধু তাদেরই প্রয়োজন আছে। অন্যান্যদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে মানব সভ্যতা বিকাশের কোন তারতম্য হবে না। ক্রমে যখন মানুষের বোধ ও বুদ্ধি, বিচার ও বিশ্লেষণ এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বুঝতে পারল যে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব এবং তার স্থায়িত্ব নির্ভর করছে নানা প্রকার জীবের উপস্থিতির উপরেও।

যেখানে যত বেশি ধরনের জীবগোষ্ঠী বর্তমান সেখানকার পরিবেশ তথা বাস্তু তন্ত্র তত বেশি সুস্থিত। এই সত্য জানার পর পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জীবের বৈচিত্রতাকে পরিবেশ সুস্থিতির লক্ষণ অথবা সূচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বর্তমান দূষণ ও পরিবেশ অবক্ষয়ের ফলে ক্রমাগত যে জীব বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে তা বর্তমান সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট রূপে দেখা দিয়েছে। তাই অবসম্ভাবী হয়ে পড়েছে জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণ। পৃথিবী যে শুধুমাত্র মানুষের নয় এবং বর্তমানে অন্যান্য জীবের বিপন্ন অস্তিত্বের সাথে সাথেই মানুষেরও অস্তিত্ব যে সমানভাবে বিপন্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মানুষ সমস্ত জীবের চেয়ে বুদ্ধিমান হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে পৃথিবীর ওপর প্রভুত্ব তার একপেশে। নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণেই অবাঞ্চিতভাবে বন ও বন্যপ্রাণীর হত্যা আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেল। এই বর্ণ ও বন্য প্রাণীর অস্বাভাবিক সংখ্যা হ্রাসের ফলে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ক্রমশ বিঘ্নিত হতে লাগলো। একদিকে নির্বিচারে বন ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস, অপরদিকে মানুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের ফলেই জিভ প্রজাতির সংখ্যা অর্থাৎ জীব বৈচিত্র্য আশঙ্কাজনকভাবে কমতে লাগলো।

জীব বৈচিত্র্য তার সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা সমানুপাতিক হওয়ায় জীববৈচিত্রতা হ্রাসের সাথে সাথে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতাও ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। যার পরিণাম ভয়ংকর রূপের সমগ্র জীবের অস্তিত্বের সংকট রূপে দেখা দিবে অচিরেই। বাস্তুতন্ত্রের সম্পর্কের বাইরেও মানুষের সাথে সমগ্র জীব-বৈচিত্রের আলাদা মূল্য আছে তা ধর্ম ও সংস্কৃতি, সৌন্দর্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, ঔষধি এবং আরো নানাবিধ দৈনন্দিন কাজে মানুষ জীববৈচিত্রের সাথে অতপ্রভাবে যুক্ত ।

কিন্তু অর্থললুপতার জন্য আরো বেশি সম্পদ ভোগ আরো বেশি প্রতিপত্তি লাভের নেশায় মানুষ নির্বিচারে বন-সম্পদকে নষ্ট করছে, অবাঞ্চিতভাবে হত্যা করছে নানা প্রকার জীবকে, তাদের বাসস্থানকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে এবং দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের মাধ্যমে হাজার হাজার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়েছি এবং অস্তিত্বের সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

পৃথিবীতে মোট আবিষ্কৃত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার টির মত । কিন্তু জীব বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন যে প্রকৃত প্রজাতির সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই সমগ্র জীববৈচিত্র্য দশ শতাংশ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৪৭ হাজার গাছের প্রজাতি ও ৮১ হাজার প্রাণিপ্রজাতি বর্তমান রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের দূষণ, বাসস্থানের ধ্বংস গঠন, অবাঞ্ছিত প্রাণী হত্যা তথা সমগ্র প্রাকৃতিক পরিবেশের অস্বাভাবিকতার জন্য প্রজাতির বিলুপ্তির গতিও ক্রমশ ত্বরান্বিত হচ্ছে।

এই বিলুপ্তির গতি বর্তমান শতকে এত দ্রুত হবে যে প্রতি ঘন্টায় একটি করে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সংরক্ষণই হচ্ছে জীববৈচিত্রতা রক্ষার একটি উপায়। এই সংরক্ষণের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো বাস্তুতন্ত্রের আবশ্যিক প্রক্রিয়াগুলিকে কার্যক্রম করে রাখা। প্রয়োজনীয় জীবের পুনঃ পুনঃ ব্যবহারের জন্য সুস্থিতকরন, মানুষের নির্মল আমল প্রমোদের ব্যবস্থা করা। এই উপলক্ষে জীব বৈচিত্র্যতার যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রাথমিক পর্যায়ে বনভূমি সংরক্ষণ, মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও জলসম্পদকে সংরক্ষণ করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে জীব সংরক্ষণের উপলক্ষে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম ক্ষেত্রে লুপ্তপ্রায় জীবের তাদের জীব, রেনু, ডিম্বাণু, শুক্রাণু বা দেহাংশের সংরক্ষণের মাধ্যমে সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে সফল করা হয় । বন ও বন্যপ্রাণী হত্যা কিংবা ধ্বংস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এক একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে বন ও বন্যপ্রাণী তথা জীববৈচিত্র থাকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে বিশেষ প্রাণী বা উদ্ভিদ, তাদের বাসস্থান অথবা সম্পূর্ণ বাস্তু তন্ত্রের সংরক্ষণের মাধ্যমে জীব বৈচিত্র্যতা সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সপ্তম জাতীয় স্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো biodiver treaty, তবে সবশেষে এই কথা বলা যায় যে সংরক্ষণের মাধ্যমে কিছু অবলুপ্ত প্রায় জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলেও যদি সংরক্ষণের প্রতি জনসচেতনতা না বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে অচিরেই সমস্ত প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *