chandrayaan-3 – চন্দ্রযান-৩ এর বৈশিষ্ট্য, কি কি টেকনিক রয়েছে, চাঁদে কোথায় ল্যান্ডিং করবে, চাঁদে গিয়ে কি কি কাজ করবে জানুন বিস্তারিত। এছাড়া চাঁদের সাউথ পল কি জানুন।

chandrayaan-3

সময় ছিল ১৯৬৯ সাল যেখানে চাঁদেতে কোন একজন প্রথম পা রেখেছিল। হ্যাঁ আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি। ব্যক্তিটি হলেন নীল আর্মস্ট্রং। এবং মিশন টি ছিল আমেরিকার নাসার । এবং মিশনটির নাম ছিল মিশন অ্যাপোলো ১১ । যেখানে পৃথিবীর মানুষেরা চাঁদের একটি নতুন দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিল।

আমেরিকার এই মিশনের পর পৃথিবীর বহু দেশের মধ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল চাঁদে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু কাজটি এতটাও সহজ ছিল না। কেননা এর জন্য প্রয়োজন ছিল বিশেষ ধরনের টেকনোলজি এবং অর্থ। যা ওই সময় প্রায় সমস্ত দেশেই এর অভাব ছিল।

যদি দেখা যায় ভারত কিন্তু ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই স্বপ্ন দেখেছিল। এর জন্য নতুন একটি মিশন তৈরি করা হয়েছিল। যার নাম দেয়া হয়েছিল “মিশন চন্দ্রযান”, যা ছিল ভারতের “লুনার মিশন”। চন্দ্রযান মিশন ভারতের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুবই গুরুতবপূর্ণ।

বিশেষত চন্দ্রযান ৩ চাঁদের এমন এমন ক্ষেত্র বা বিষয়গুলিকে অনুসন্ধান করবে, যেগুলি সম্পর্কে তথ্য বিশ্বের কাছে খুব একটা নাই বললেই চলে। যদি ভারত এই এই মিশনে সাকসেসফুল হয়, তাহলে ভারতের spacefaring মিশনে অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে যাবে, অর্থাৎ অন্যান্য দেশগুলিকে লিড দিয়ে চলবে। এর ফলে ভারতের ঐতিহ্য বিশেষত টেকনোলজি এবং spacefaring ক্ষেত্রে বাড়িয়ে তুলবে।

এছাড়া এর geo political গুরুত্ব অনেক রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে চন্দ্রযান মিশন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং নেতৃস্থানীয় মহাকাশযান দেশ এরমধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করবে।

এছাড়া আপনার হয়তো মনে রয়েছে। চন্দ্রযান ২ বিশ্বের জন্য প্রথম মিশন ছিল, যার লুনার কে চাঁদের দক্ষিণ মেরু ( South Pole ) অঞ্চলে ল্যান্ড করার কথা ছিল। কিন্তু ল্যান্ড করার সময় সেটি ক্র্যাশ হয়ে গিয়েছিল। সেই মিশনকেই কমপ্লিট করার জন্য চন্দ্রযান ৩ কে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করার জন্য পুনরায় পাঠানো হয়েছে।

আমি আপনাদেরকে জানকারীর উদ্দেশ্যে বলে রাখি চাঁদের সাউথ পল ( south pole ) হল ২.৪ কিলোমিটার। যেটি ডিপ সকেলটন ক্রিয়েটারের (deep shackleton creater) বা চাঁদের গভীর খাতের অংশ । এই গভীর খাদ অংশগুলোতে হাজার হাজার বছর ধরে সূর্যের আলো পৌঁছায়নি। যার কারণে ওই গভীর খাত গুলোর তাপমাত্রা প্রায় -২৬৫°F এর আশেপাশে থেকে থাকে।

যার কারণে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক এবং এক্সপার্টরা মনে করেন যে, ওই সমস্ত অঞ্চল গুলিতে হাইড্রোজেনের মাত্রা বেশি থাকার কারণে জল থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এবং অনুমান করা হচ্ছে যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি স্ফটিকে পরিণত হওয়া (crystallised) জল রয়েছে।

এছাড়া এই অঞ্চলে এমোনিয়া, মিথেন, মারকিউরি, সোডিয়াম এবং সিলভার এর মত অপরিহার্য উপাদানের নিশানি বা অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তো এইভাবে চন্দ্রযান ৩ ( chandrayaan 3 ) চাঁদের south pole এর মৌলিক এবং অবস্থানগত কারণে ভবিষ্যতে খুবই সাহায্যকারী হবে বলে আশা করা যায়। এবং যা মহাকাশ অনুসন্ধান (space exploratio) এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে দেখা যায় যে আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, চীনে এবং ইউরোপীয় বিভিন্ন মহাকাশ এজেন্সিগুলি চাঁদের south pole এলাকায় স্যাটেলাইট পৌঁছানোর জন্য খুবই তৎপরতা দেখাচ্ছে।

যদি দেখা যায় খরচের ব্যাপার, সেক্ষেত্রে চন্দ্রযান ৩ তে প্রায় ৬১০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। যা অন্যান্য দেশের চাঁদে পাঠানো স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক কম। ISRO ( Indian Space Research Organisation ) অর্থাৎ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে চন্দ্রযান ৩ চাঁদে পাঠানো হয়। ISRO বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থেকেছে।

আপনি এই মিশনটির উদাহরণ হিসেবে মঙ্গল যান মিশন কেউ ধরতে পারেন। যেখানে মাত্র প্রায় ৭৫ মিলিয়নের কাছাকাছি ডলার খরচ করে এবং একবারের প্রচেষ্টাতেই মঙ্গল গ্রহে “মঙ্গলযান” নামক স্যাটেলাইট পাঠিয়ে সারা দুনিয়াকে অবাক করে দিয়েছিল।

চলুন চন্দ্রযান-৩ ( chandrayaan-3 ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। এর আগে জেনে নেয়া যাক যে চন্দ্রযান মিশন কি। চন্দ্রযান ISRO এর একটি মিশন। যেটি চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি করা হয়। এই মিশনের শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ থেকে। প্রথম পদক্ষেপেই চন্দ্রযান-১ সাকসেসফুল হবে চাঁদেতে ল্যান্ডিং করা গিয়েছিল। এটিই প্রথম মিশন ছিল ভারতের জন্য যেখানে চাঁদেতে জল, বরফ এবং অন্যান্য উপাদানের অস্তিত্বকে খুঁজে বার করে। এবং ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদেতে স্যাটেলাইট পাঠানোর জন্য জানা যায়। তবে ২০০৯ সালে চন্দ্রযান-১ এর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় isro থেকে।

এরপর পুনরায় 2019 সালে isro দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল south pole এলাকায় ল্যান্ড করানোর জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ল্যান্ড করার কিছু কিলোমিটার আগে এটি ক্রাশ অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায় এবং হেডকোয়ার্টার থেকে এরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এবং isro এর চাঁদের south pole এলাকায় প্রথম ল্যান্ড করার আশাও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

কিন্তু isro এই ব্যর্থতাকে মেনে নিয়েও পুনরায় চাঁদের সাউথ পল এলাকায় চন্দ্রযান পাঠানোর জন্য জোর কদমে কাজ চালিয়ে যায়। এবং ১৪ই জুলাই ২০২৩ এ এটিকে চাঁদের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ( chandrayaan 3 launch date ) করা হয়।

যদি দেখা যায় চন্দ্রযান-৩ বিশেষত চন্দ্রযান-২ কেই অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতেও চন্দ্রযান-২ এর মত একটি ল্যান্ডার এবং একটি লোভার কনফিগারেশন রয়েছে। একে কেউ সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে লঞ্চ করা হয়েছে। এবং এই চন্দ্রযান-৩ এর ওজন প্রায় ৩৯০০ কেজি। চন্দ্রযান-৩ এ অরবিটার (orbiter) নাই, কারণ চন্দ্রযান-২ ল্যান্ডিংয়ের সময় শুধুমাত্র লেন্ডারই ক্রাশ হয়েছিল। কিন্তু অরবিটে যে অরবিটর ছাড়া হয়েছিল সেটি এখনো পর্যন্ত স্মুথলি ভাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনো সংগ্রহ করছে। এই কারণে চন্দ্রযান-৩ তে কোন অরবিটর পাঠানো হয়নি। কারণ চন্দ্রযান-২ এর অরবিটরই ব্যবহার করা হবে চন্দ্রযান-৩ তে।

চন্দ্রযান-৩ (chandrayaan 3) এর তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, লুনারের সারফেসে সফটলি ভাবে ল্যান্ডিং হওয়ার জন্য বানানো পদ্ধতি। দ্বিতীয়, রোভার স্মুথলি ভাবে ল্যান্ডিং হওয়ার জন্য বানানোর পদ্ধতি। তৃতীয়ত, লুনারের south pole সাইন্টিফিক ভাবে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি।

চন্দ্রযান-৩ কি এমন ভাবে বানানো হয়েছে যাতে। এটি চাঁদের যে কোন জায়গায় ভালোভাবে ল্যান্ডিং করা যায় এবং রোভার যেকোনো জায়গায় লঞ্চ করা যায়। এতে চারটি ল্যান্ডিং লেক্স, এবং অনেকগুলো উন্নতমানের সেনসর ও ক্যামেরা লাগানো আছে, এক্স-ভিনা এন্টেনা যুক্ত রয়েছে যোগাযোগের জন্য, এর রোভার আয়তকার আকারের এবং এটি ছয় চাকা যুক্ত ও এতে একটি নেভিগেশন ক্যামেরাযুক্ত রয়েছে।

এখন যদি আপনি মনে ভাবছেন যে চন্দ্রযান-৩ কিভাবে ISRO এর সঙ্গে যোগাযোগ করবে, তাহলে আমি জানকারীর উদ্দেশ্যে বলে দেই। লাঞ্চার থেকে লেন্ডারটি চাঁদে ল্যান্ডিং হওয়ার পর, রোভারটিও লেন্ডার থেকে আলাদা হয়ে যাবে। এবং রোভার যত ইনফরমেশন ক্যাচ করবে সেগুলিকে লেন্ডারে সেন্ড করবে এবং লেন্ডার যোগাযোগ করবে IDSN অর্থাৎ Indian Deep Space Network এর সঙ্গে, এবং এর মাধ্যমে ISRO ইনফরমেশন পেয়ে যাবে।

এখন অনেকের মনে হয়তো এই ধারণা জাগছে। যে এরও চাঁদেতে ল্যান্ডিং হওয়ার হয়তো সম্ভাবনা নয়। আমি আপনাদেরকে বলে রাখি যে চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদেতে ল্যান্ডিং হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯% এরও বেশি রয়েছে। কারণ চন্দ্রযান-২ এবং চন্দ্রযান-৩ এর উদ্দেশ্য একই হলেও। এই বিগত চার বছরের মধ্যে ISRO চন্দ্রযান-৩ এর মধ্য বিভিন্ন দিকে ভালোভাবে ডেভেলপ করেছে এবং উন্নতমানের টেকনোলজি প্রয়োগ করেছে।

যেমন চন্দ্রযান-২ এর তুলনায় চন্দ্রযান-৩ তে বেশি ফিউল নিয়ে যাওয়ার ক্যাপাসিটি রয়েছে। চন্দ্রযান-২ এর তুলনায় চন্দ্রযান-৩ তে ল্যান্ডিং ক্ষেত্রগুলিকে বেশি পরিমাণে সফট এবং উন্নত করা হয়েছে। বড় সোলার প্যানেলের সঙ্গে বেশি পরিমাণে সেন্সর লাগিয়ে ইনস্টল করা হয়েছে যাতে বেশি পরিমাণে শক্তি প্রদান করতে পারে। এর অ্যালগরিদম কেও আগের তুলনায় অনেক উন্নত করা হয়েছে। এতে নতুন ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে যাতে ভালোভাবে ল্যান্ডিং করা যায়, এবং প্রয়োজন হলে লার্নিং এর জায়গাও যাতে পরিবর্তন করা যায়।

এই চন্দ্রযান-৩ ছাড়াও আরো দুটি চন্দ্রযান যেমন চন্দ্রযান-৪ ও চন্দ্রযান-৫ এর উপর কাজ চলছে। এইগুলি কেউ কয়েক বছরের মধ্যে চাঁদে পাঠানোর ব্যবস্থাপনা করা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *