effects of water pollution | জল দূষণের কারণ ও প্রভাব | causes of water pollution

effects of water pollution – এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন জল দূষণের কারণগুলি কি কি, জীবজগতের উপর এর কিরূপ প্রভাব পড়ে। এবং জল বিশুদ্ধ করার উপায়।

effects of water pollution

যখন জলেতে বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ ও উপকরণ মিশে, জলের স্বাভাবিকত্ব হারায়, অর্থাৎ জলের যে স্বাভাবিক গুণ তা বিনষ্ট হয়, এবং যা মানুষ ও অন্যান্য পশুপাখিদের পানির বা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠে। তখন তাকে আমরা দূষিত জল বা জল দূষণ বলতে পারি।

জল দূষণের প্রভাব মানুষ জগত থেকে শুরু করি বিশ্বের বিভিন্ন পশু-পাখি অর্থাৎ সমস্ত জীবজগৎকেই এর কবলে পড়তে হয়। এবং এই দূষিত জল পান করার ফলে মানুষ সহ সমগ্র জীব জগতেরই শারীরিক দিক থেকে বিভিন্নভাবে সমস্যায় পড়তে হয়।

আমাদের দেশে বা বিদেশে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ,এমন অনেক কারণ রয়েছে সেগুলি জল দূষণের জন্য বিশেষ বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। নিম্নে জল দূষণের প্রধান কারণ গুলি কি কি রয়েছে। এই জল দূষণের প্রভাব মানব জাতি সহ সমগ্র জীবজগতের উপর কি প্রভাব ফেলে তা আলোচনা করা হল ।

📝👉 জল দূষণের কারণ ( effects of water pollution )

জল দূষণের প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রাকৃতিক কারণ এবং দ্বিতীয়তঃ, মানবীয় কারণ

👉জল দূষণের প্রাকৃতিক কারণ

প্রাকৃতিকভাবে জল দূষণের মাত্রা খুবই কম হয়। প্রধানত পোলি জমা বা বৃষ্টির জল ধৌত প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্থিত লবণ যদি বা জলাশের জলে মেশে তার ফলে জল দূষণ ঘটতে পারে।

👉জল দূষণের মানবীয় বা কৃত্রিম কারণ

জল সবচেয়ে বেশি দূষিত হয় মানুষের কৃতকর্মের ফলেই। যেমন –

গৃহস্থলীর দৈনন্দিন কাজে উৎপন্ন নোংরা জল – গৃহস্থলীর আবর্জনা বা হোটেল থেকে নির্গত দূষিত জল বা পায়খানা, প্রসাব জলে মেশার ফলে জল দূষণ ঘটে। তাছাড়া জামা ও কাপড় ধোয়া, সাবান জল, অপ্রয়োজনীয় কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিক প্রভৃতি পুকুর জলাশয় মিশে জল দূষণ ঘটায়।

শহরাঞ্চলের পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশিত জল – শহরাঞ্চল বা নগরের পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশিত জল পাইপের দ্বারা নদীতে এসে মিশলে জল দূষিত হয় ।

কলকারখানার নিষ্কাশিত তরল বর্জ্য পদার্থ – বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা থেকে ক্লোরিন, কস্টিক সোডা, ফেনল, অ্যামোনিয়া সমুদ্র বা নদীর জলে মিশে জল দূষণ ঘটায়।

কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক পদার্থ – কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক পেস্ট, আগাছানাশক, রাসায়নিক সার, পঁচা পাতা ইত্যাদি জলে মিশলে জল দূষণ ঘটে।

ইউট্রোফিকেশন – মানুষ্য ঘটিত বিভিন্ন কারণে জলে পুষ্টিকর খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জলে বিভিন্ন প্লাংটনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে একে ইউট্রোফিকেশন বলে। এর ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ হর্স পায় একে বায়োলজিক্যাল ডিমান্ড বলে। ফলে জল ব্যবহার-অযোগ্য হয়ে পড়ে জল দূষিত হয়।

এছাড়া –

  • বৃষ্টির পর গ্রাম, শহর, নগর প্রভৃতি অঞ্চলের বৃষ্টির জলের সাথে ধুলোবালি, মৃতদেহ, আবর্জনা নদী ও সমুদ্র প্রভৃতি জলে মিশে জল দূষণ সৃষ্টি করে।
  • সমুদ্রে ভাসমান জাহাজ থেকে তেল চুঁয়ে, জাহাজে জায়গায় যে সংঘর্ষের ফলে জাহাজে আগুন লাগলে বা তৈল ক্ষেত্রের থেকে তেল সমুদ্রে মিশলে সমুদ্রের জলের ওপর তেলের আস্তরণ সৃষ্টি হয় ফলে জল দূষণ ঘটে।
  • অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে জলে অম্লের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জল দূষণ সৃষ্টি হয়।
  • তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গরম জল মিশলেও জল দূষণ সৃষ্টি হয়।
  • জলের তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিচে জল দূষণ সৃষ্টি হয়। প্রধানত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিস্ফোরণ এর জন্য দায়ী।
  • অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে জলে আর্সেনিক ও কলিকোরিন মিশ্রিত জল দূষণ ঘটে।
  • রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মল-মূত্র ও গবাদি পশু প্রভৃতি থেকে জলে জীবাণু প্রবেশ করে জল দূষণ ঘটায়।

📝👉 জল দূষণের প্রভাব ( causes of water pollution )

জল দূষণ জীবজগতে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে থাকে। তা ক্ষুদ্র জীব থেকে বৃহৎ মনুষ্য জাতি সবারই। নিম্নে জল দূষণের প্রভাব মানব দেহের উপর কিরূপ ভাবে ফেলে, মাটির উপর কি রূপ প্রভাবশালী এবং জলজ প্রাণীদের ওপর জল দূষণের প্রভাব কিরূপ পরে তা উল্লেখ করা হল –

মানবদেহের উপর জল দূষণের প্রভাব

  • জল দূষণের ফলে জলে মিশ্রিত জীবাণুর দ্বারা কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, জন্ডিস, আন্ত্রিক, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ প্রভৃতি হয়ে থাকে।
  • আর্সেনিক মিশ্রিত জল থেকে মানুষ মারম রোগে আক্রান্ত হয়।
  • ভারী ধাতুঘটিত জল দূষণের ফলে চর্মরোগ ও পেটের রোগ হয়। যেমন মিনামাটা রোগের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
  • ফ্লুরিন ঘটিত জল এলার্জি, চোখের রোগ, কিডনি সমস্যা, প্যারালাইসিস, হাড়ের বিকৃতি প্রভৃতি দুরূহ ব্যাধি সৃষ্টি হয়।

মাটির উপর জল দূষণের প্রভাব

  • দূষিত ভৌম জল মাটিতে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার ফলে মাটি দূষিত হয়।
  • দূষিত জল শস্যের শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটায়। মাটির উর্বর শক্তি কমিয়ে দেয় । ফলে ফসল হাথ ঘটে।

জলযোগ প্রাণীদের ওপর প্রভাব

  • সমুদ্রের জলে তৈলঘটিত দূষণ ঘটলে সামুদ্রিক প্রাণী মাছ প্রভৃতি ধ্বংস হয়। এবং বিভিন্ন জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা ও হ্রাস ঘটে।
  • দূষিত জল উদ্ভিদ দেহে বিষক্রিয়ার ফলে উদ্ভিদের নানা রোগ সৃষ্টি হয়।
  • সামুদ্রিক জল দূষণের ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়।
  • দূষিত তৈল সমুদ্রের জলে মেশার ফলে সামুদ্রিক পাখিদের পালকের তেল জড়িয়ে যায়, ফলে তারা ওড়ার ক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলে।
  • উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার পাখি অসহায় ভাবে মারা পড়ে। কেননা সেখানে একদিকে যেমন বিভিন্ন জাহাজ ধ্বংস হয়ে জাহাজের আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ জল মিশিয়ে। সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধ উপকরণের বারুদ ও ময়লা জলে মিশে।

👉 জল বিশুদ্ধ করার উপায় সমূহ

বিভিন্ন কারণে সর্বত্রই কিছুটা হলেও জল দূষিত হচ্ছে। তাই ওই দূষিত জলকে কিভাবে বিশুদ্ধ করা যায় তা আমাদের অবশ্যই জানা দরকার। এবং জলকে বিশুদ্ধ করে পান করলে, আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগ জেলা থেকে দূরে থাকবে। কেননা জলের অপর নাম জীবন। নিম্নে জল বিশুদ্ধ করার সহজ উপায় গুলি উল্লেখ করা হল –

  • বর্তমানে লক্ষ্য করা গেলে এখনও দেখা যাবে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল গুলোতে কিছু কিছু জায়গায় এখনো মানুষ বিভিন্ন কাজে নদী বা পুকুরের জল ব্যবহার করে। যেমন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বা চাল ধোয়ার জন্য। আবার অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখানে মানুষ নদীর জলে পান করে। তাই ওই সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলিতে যাতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছানো যায় তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
  • ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় ১০ মিনিটের মতো জল ফোটালেই জলের প্রায় ৯৯% জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
  • খোলা জলের ক্ষেত্রে সব থেকে সহজ উপায় হল জলটা ঢাকা দিয়ে সব সময় রাখা। তাহলে জলে কোন জীবাণু বা মশা মাছি অন্যান্য কীটপতঙ্গ বুঝতে পারবে না বা পড়বে না।
  • নির্দিষ্ট পরিমানে জলে ক্লোরিন জল দিলেও জলের জীবাণু অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়।
  • আরো একটা খুব সহজ এবং কার্যকারী উপায় হল সূর্যের আলোর মাধ্যমে জলকে গরম করে নেওয়া। যদি জলকে রোদে ছয় থেকে সাত ঘন্টা রেখে দেয়া হয়, তাহলে প্রায় আগুনে ফোটানো জলের মতোই বিশুদ্ধ জল পাওয়া যায়।
  • জলে যদি হালকা ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয় তাহলেও কিন্তু জল বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে।
  • জল নেয়ার সময় জল রাখার পাত্রকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  • যদি টিউবয়েলের বা সাবমার্সালের চল খুবই লাল ধরনের ওঠে তাহলে জল পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে জলেতে আয়রনের পরিমাণ খুব বেশি রয়েছে কিনা। তাছাড়া বছরে কমপক্ষে একবার জল পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে জলেতে আর্সেনিক রয়েছে কিনা। কেননা আর্সেনিকযুক্ত জল খেলে হতে ও পায়ে মিনামাটা রোগ হতে পারে।
  • তাছাড়া যদি জ্বলে আবর্জনা থাকে বলে মনে হয় বা পাইপের ময়লা উঠছে বলে মনে হয়। তাহলে একটি ফিল্টার কিনে সেই ফিল্টারের মাধ্যমেও জল ফিল্টার করে নিতে পারেন। তাহলে একেবারে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ জল পেয়ে যাবেন।

📝👉 FAQ of effects of water pollution

Q) এক কথায় জল দূষণ কি ?

জলে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ও দূষিত পদার্থ পড়ে যখন ওই জল জীবজগতের খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে তখন তা দূষিত জল বা জল দূষণ হিসেবে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *