f. w. taylor theory – টেলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব ও এর সমালোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এফ. ডব্লিউ. টেলর প্রথম শিল্প ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। তাই তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়। অর্থাৎ তিনিই প্রথম পথপ্রদর্শক যিনি বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালনার কথা বলেন।
টেলার তার “প্রিন্সিপাল অফ সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট পুস্তকে” উল্লেখ করেছেন, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনার সাহায্যে উৎপাদিকা শক্তির সর্বাধিক ব্যবহার ও কর্মী বর্গের কর্মদক্ষ তার পূর্ণ উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা যায়। টেইলর এর অবদান চারটি ক্ষেত্রে নিচে আলোচনা করা হলো।
📝 ব্যাবস্থাপনায় টেইলর এর অবদান
✍️কারিগরি অবদান
টেলরের মতে কাজ বিভিন্নভাবে সম্পাদন করা যায়। ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল সহজ তম পদ্ধতিতে, কম সময়ে, কম পরিশ্রমে ও কম ব্যয় অধিক উৎপাদন করা। কোন কাজ যদি সুনির্দিষ্ট সময়, নিয়ম নীতি ও পরিকল্পনা অনুসারে করা হয় তাহলে কাজটি সহজেই সম্পাদন করা যায়।
✍️ বৈজ্ঞানিক নীতির প্রয়োগ
গতানুগতিক নীতির পরিবর্তে ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক নীতির প্রয়োগের কথা বলেছেন। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনাকে সুনির্দিষ্ট ভাবে পরিচালনার জন্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত পদ্ধতিগুলি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োগের কথা বলেছেন। টেলর এর ব্যবস্থাপনায় চারটি বৈজ্ঞানিক নীতির ( f. w. taylor management theory ) উল্লেখ পাওয়া যায় –
প্রকৃত বিজ্ঞানের উন্নয়ন – এই নীতিতে বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অনুশীলন করা ও ব্যবস্থাপনায় তার প্রয়োগ করা।
বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মী নির্বাচন – উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ করা।
কর্মীদের বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও উন্নয়ন – কর্মীদের বৈজ্ঞানিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করা।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন – ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
✍️ সাংগঠনিক ও ক্রিয়াগত অবদান
টেলর ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যেমন –
পরিকল্পিত ও সম্পাদিত কাজের পৃথকীকরণ – সাধারণত বিশেষজ্ঞরা পরিকল্পনা করেন এবং কর্মীরা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। তিনি কার্যাবলী কে দুটি ভাগে বিভাজন করার কথা বলেছেন। পরিকল্পনা যা ব্যবস্থাপক নির্ভর এবং বাস্তবায়ন যা কর্মী নির্ভর। সঠিকভাবে কাজ পরিচালনা করতে হলে পরিকল্পিত কাজ ও বাস্তবায়নের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে।
উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ – উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত কাজের জন্য নির্বাচন করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
কাজের ব্যবস্থাপনা – কোন কর্মী কি ধরনের কাজ করবে এবং কত সময়ে কিভাবে কাজ সম্পাদন করবে তার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।
কাজ অনুসারে মুখ্য কর্মী বিভাজন – কাজ অনুসারে মুখ্য কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে কাজের তত্ত্বাবধান করতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য পৃথক পৃথক তত্ত্বাবধান করার লোক নিয়োগ করতে হবে।।
ব্যয় নিয়ন্ত্রণ – ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার সময় ব্যয় সংকোচন ও নিয়ন্ত্রণের বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
ব্যতিক্রমী নীতি প্রবর্তন – স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত না করে কাজের ক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যতিক্রমী বিষয় দেখা যাবে সেই সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।
✍️ দার্শনিক অবদান
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে টেলরের এর অবদানগুলি নিম্নরূপ –
উৎপাদন শক্তির উন্নতি – কর্মীদের প্রশিক্ষণের সাহায্যে দক্ষতা বাড়িয়ে উৎপাদিকা শক্তি বাড়াতে হবে।
পারস্পারিক উন্নতি – কর্মী ও মালিক এবং কর্মী ও কর্মী সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ স্থাপন করতে হবে।
উচ্চ মজুরি কিন্তু নিম্ন শ্রম ব্যয় – কর্মীদের উচ্ছে আরে মজুরি দিয়ে উৎপাদিকা শক্তি বাড়াতে হবে, ফলে মোট শ্রম ব্যয় করবে ।
মানসিক বিবর্তন – সংগঠনের কর্মীদের বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মানসিক জোড় বাড়িয়ে মানসিক বিবর্তন ঘটাতে পারলেই কাজ অনেক সহজ ভাবে করানো যায়।
সহযোগিতা – ব্যবস্থাপনা ও কর্মীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে উভয়ের মধ্য সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
📝 টেলরের তত্ত্বের সমালোচনা
টেলরের এর অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হওয়ার ফলে এবং কিছু বিষয়কে অবহেলা করার ফলে তার মতবাদ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে, যেমন –
উৎপাদনের উপর অধিক গুরুত্ব – টেলর তার তত্ত্বে কেবলমাত্র উৎপাদনের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। উৎপাদন ছাড়াও ব্যবস্থাপনার যে অন্যান্য বিষয় আছে সেই ক্ষেত্রে তিনি তার তত্ত্বে উল্লেখই করেননি। সেই জন্য এই তথ্যটি অনেকেই ব্যবস্থাপনার সর্বাঙ্গীন তথ্য না বলে শুধুমাত্র শিল্প বাস্তু তত্ত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ এটি আংশিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব যা উপাদান নির্ভর।
পদ্ধতির ওপর অধিক গুরুত্ব – টেলর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে গতিশীলতাকে উপেক্ষা করেছেন। তিনি গতানুগতিক প্রথার পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক রীতিনীতি প্রয়োগের উপর জোর দিয়েছেন, কিন্তু কিভাবে গতিশীলতা বাড়াতে হবে তার ইঙ্গিত তিনি দেননি। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনার ক্রিয়াগত দিক উল্লেখ করেন নি।
কর্মীদের শ্রম ও ত্যাগ উপেক্ষিত – টেলর তার তত্ত্বে কর্মীদের শ্রম ও ত্যাগকে তেমন গুরুত্ব দেননি, বরং কর্মীদের শ্রম ও অক্লান্ত পরিশ্রমকে উপেক্ষা করেছেন।
স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া – টেলর ব্যবস্থাপনাকে একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা কখনো স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া হতে পারে না, কারণ ব্যবস্থাপনা একটি নিয়মমাফিক কাজ।
সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, টেলর এমন একজন ব্যক্তি যিনি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার প্রথম পথপ্রদর্শক। তিনি ব্যবস্থাপনাকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে কতগুলি সুনিদৃষ্ট নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেছেন। টেলর এর বিভিন্ন ভাবে সমালোচিত হলেও তার এই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। সেই দিক থেকে টেলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব ( f. w. taylor scientific management theory ) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।