protection of environment – পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষ এবং সমাজের ভূমিকা কি, পরিবেশগত নৈতিক সত্যতা কি, জানুন বিস্তারিত।
👉পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষ এবং সমাজের ভূমিকা কি
প্রাণী উদ্ভিদ এবং মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রয়োজন হয় তাকেই আমরা সাধারণভাবে বলে থাকি পরিবেশ। এই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জল, বাতাস, মাটি, প্রাণী ও উদ্ভিদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ। মানুষ পরিবেশের এমন একটি উপাদান যার নিয়ন্ত্রণে একটি পরিবেশের সুস্থতা ও সুন্দরতা নির্ভর করে। সভ্যতার আদিকাল থেকেই মানুষ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, মানসী সমাজের সৃষ্টিকর্তা। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সমাজের ভূমিকা পরোক্ষভাবে মানুষের ভূমিকার ওপরেই নির্ভরশীল।
সামাজিক বিবর্তনের ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে পরিবেশকে চিনতে শিখেছে, রক্ষা করতে শিখেছে। সমাজ সৃষ্টির শুরুতে মানুষ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে নিজেরাই নষ্ট করেছে, কিন্তু ধারাবাহিক সমাজ সচেতনতাই মানুষ আবার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গেলে দরকার পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের সঠিক ব্যবহার ও অপব্যয় রক্ষা করা। যা একমাত্র মানুষই পারে। আবার সব মানুষ মিলে যদি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তবে তা আবার সামাজিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরিবেশের বর্তমান অবস্থা এবং পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন মতামত ও চিন্তা ধারাকে পরিবেশবাদ বলে।
এই পরিবেশবাদী আজ মানুষ ও সমাজকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় (protection of environment) আরো বেশি করে ভাবতে শিখিয়েছে। মানুষ উন্নয়নশীল। তাই পরিবেশের চিরস্থায়ী উন্নতির জন্য পরিবেশের কার্যপ্রণালী কে ভালোভাবে বুঝতে হবে, জীবন ধারণের সহায়ক সম্পদ গুলিকে সংরক্ষণ করতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সম্পদের অতি ব্যবহার ও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। এর জন্য মানুষ যেমন প্রয়োজন তেমনি সমাজ, কারণ বিশাল পরিবেশ কোন সংখ্যাগত মানুষ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না।, তাই চাই সমাজ। মানুষ, সমাজ ও পরিবেশ আজ এমনভাবে প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর নির্ভরশীল যে, একটি অভাব অন্য দুটির ওপরে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
মানুষ সমাজের উন্নতির জন্য বর্তমানে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের কাছে এমন এক সময় যেখানে একদিকে সমাজের উন্নতি করতে হবে, কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে এবং এর জন্য যে সমস্ত চিরস্থায়ী পদ্ধতিগুলি মানুষকে মেনে চলতে হবে সেগুলি হল –
- জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ
- দূষণের মাত্রা কমানো যথাসম্ভব
- নবী ভবন যোগ্য শক্তির ওপর বেশি নির্ভর করা
- জৈব বৈচিত্র সংরক্ষণ করা
- বিশেষ করে সম্পদের আবর্তন ও পুনর্ব্যবহার করা
- সমাজে পরিবেশের শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ানো
আজ একমাত্র উপরোক্ত পদ্ধতিগুলির প্রয়োগেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। পরিবেশের বেঁচে থাকতে গেলে মানুষই আজ পারে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে। কিন্তু সমাজে উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে মানসী পারেনা উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি সঠিক প্রয়োগ করতে। তাই বর্তমান সমাজে মানুষকেই নিজেদের স্বার্থে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ( protection of environment ) হবে।
👉পরিবেশগত নৈতিক সত্যতা কি?
আমাদের চারপাশে যে প্রাকৃতিক জগত যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের ওপর বিশেষভাবে বা বলা যেতে পারে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাকেই আমরা এক কথায় পরিবেশ বলতে পারি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে মানুষ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার উপরে পরিবেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং উৎপাদন নির্ভরশীল। নৈতিক সভ্যতা বা নৈতিক কাজ এমন নীতি মেনে চলে যা পরিবেশের পক্ষে বিশেষ সহায়ক। দর্শন শাস্ত্রের শাখা নীতিশাস্ত্রে এর প্রয়োগ বিশেষভাবে পাওয়া যায়। তাই পরিবেশের সঠিক ভারসাম্য রক্ষায় যে নীতি আমাদের মেনে চলতে হবে তাহাই পরিবেশগত নৈতিক সভ্যতা।
পরিবেশ নীতিশাস্ত্রে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত এবং মানুষের কাজকর্ম, জীবনযাপনের ধরন কেমন হওয়া উচিত তাহাই আলোচনা করা হয়। ১৯৭০ সালে প্রথম এই নীতিশাস্ত্র ব্যবহারিত হয়। কিন্তু আমাদের জানা দরকার পরিবেশের নীতিশাস্ত্র এলো কেন। আদিমকালে পৃথিবীতে জনসংখ্যা ছিল কম তাই, পরিবেশের ভারসাম্য সুন্দর বজায় ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক ও রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলে বেড়েছে পরিবেশ দূষণ, হয়েছে অম্ল বৃষ্টি, উষ্ণায়ন ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে এর আলোড়ন দেখা দিয়েছে। তৈরি হয়েছে নানা মতির মধ্যে বিতর্ক, তাই হাজার 979 সালে প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনভায়রনমেন্টাল এথিক্স নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে, যাতে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত কিছু নীতি বলা ছিল যা পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে মেনে চলতে হবে।
পরিবেশগত নৈতিক সত্যতাতে নীতিগতভাবে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান
- মানুষ্য কেন্দ্রিক নীতি শাস্ত্র
- প্রকৃতি কেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্র
মানুষ্যকেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্রে মানুষের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রেখে বলা হয়েছে। যেহেতু মানুষ সকল প্রজাতির সেরা সেহেতু সে সর্বোচ্চ সুখ ভোগ করবে। পৃথিবীর যা কিছু বৈচিত্র্য সে জৈবৈ হোক বা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ সমস্ত মানুষের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে।
অপরদিকে প্রকৃতি কেন্দ্রিক নীতি শাস্ত্রী বলা হয়েছে যে মানুষ প্রকৃতির একটি অংশ, মানুষের সাথে সকল জীবের সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে সকলের সমান ভূমিকা আছে তাই মানুষের স্বার্থেই সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না।
আমরা যদি এই দুটি নীতিশাস্ত্রের তুলনামূলক আলোচনা করি তাহলেই বুঝতে পারব যে নীতি শাস্ত্রের গুরুত্ব কতটা। যদি আমরা মানুষ্যকেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্র কে বেশি গুরুত্ব দিই তাহলে সম্পদের অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। আবার যদি প্রকৃতি কেন্দ্রিক নীতি শাস্ত্রের উপর বেশি গুরুত্ব দিই তাহলে মানুষের আত্মরক্ষার ও অস্তিত্বের অধিকারের প্রশ্ন এসে যাবে। তাই দুটি নীতি শাস্ত্রের সমান প্রয়োগে পরিবেশগত নৈতিক সত্যতা আজ সমাজের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি শাস্ত্র।
পরিবেশ নীতি শাস্ত্রের বা মানুষ্যকেন্দ্রিক নীতিশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি কথা বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত অন্যান্য প্রজাতির প্রাথমিক চাহিদা, ও আমাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার মধ্যে সীমারেখা টানা ও আমাদের সুখ সাচ্ছন্দের জন্য অন্য প্রাণীর প্রাথমিক চাহিদা বিপন্ন না করা। দ্বিতীয়তঃ নিজেদের স্বার্থে নিজেদের পরিবেশের রক্ষা করা।
এই পরিবেশগত নীতিশাস্ত্র বেশ কতগুলি নীতিশাস্ত্রের নির্দেশাবলীর ওপরে নির্ভরশীল। ১৯৮৯ সালের পর 1993 সালে বায়োথিক্স এর বৈঠকে , পরিবেশ ও প্রকৃতির সংরক্ষণ ও স্থিতিশীল উন্নতির লক্ষ্যে কিছু পালনীয় নীতি গ্রহণ করা হয় কথা –
- স্থিতিশীল উন্নতির ধারণা গ্রহণ করা।
- বাস্তুতন্ত্রের কার্যপ্রণালী উপলব্ধি করা
- বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত রাজনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা।
- পরিবেশ আমাদের নিজেদের তা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উপলব্ধি করানো।
বর্তমান পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবেশগত নীতিশাস্ত্র, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে এই নীতি কতটা পালন করা হয় তার উপর নজর রাখা। তাই পরিবেশে বাঁচতে গেলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে তার একটি পথ পরিবেশগত নৈতিক সত্যতা।