summer is hot – লু প্রবাহ কি, শৈত্য প্রবাহ কি, কতদিন চলবে এই লুল তাপপ্রবাহ, লু তাপপ্রবাহয়ে কি কি পদক্ষেপ নেবে জানুন বিস্তারিত।

 summer is hot
হচ্ছে লু কাকে বলে 
 লু কী

দিন দিন তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রা যে কোথায় গিয়ে থামবে তার কোন সীমানা নাই। গরমেতে মানুষ হাইফাই করে উঠছে, প্রশ্বাস গ্রহণ ও নিঃশ্বাস ফেলার মানুষ জায়গা পাচ্ছে না। গরমের দাবদাবহ এতটাই বেড়েছে যে, মানুষ বাড়ির বাইরে বের হতে পারছি না। বাড়ির বাইরে বেরোলেই যেন মনে হচ্ছে শরীর রোদের গরমে পড়ে যাবে। শরীর যেন চড়চড় করে উঠছে।

তাই এই পরিস্থিতিতে মানুষ খুঁজছে একটু স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু সেই বৃষ্টির কোন কূলকিনারা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ গরমে তে হাপিয়ে উঠছে। তার উপরে চলবে কয়েকদিন ধরে আবার ” লু ” প্রবাহ। তো কথা হচ্ছে লু কাকে বলে বা লু কী । ” লু ” কি জিনিস আশা করি আপনারা অনেকেই জানেন। ” লু ” হল শৈত্য প্রবাহের প্রবাহের বিপরীত অবস্থা। যেখানে শৈত্য প্রবাহে শীতকালে খুবই ঠান্ডা বাতাস বয়, সেখানে ” লু ” হল গ্রীষ্মকালে গরম বাতাসের প্রবাহ। যা গ্রীষ্মকালে পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসে। এটি এমন এক ধরনের গরম বাতাস যেন মনে হবে আগুনের গোলা কোথা থেকে যেন ছোড়া হচ্ছে ।

দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলা এবং উত্তরবঙ্গের তিন থেকে চারটা জেলায় কাল থেকে আগামী তিন থেকে চার দিন চলবে এই ” লু ” প্রবাহ। গরমের দাবদাবহ তো থাকছেই । সঙ্গে একেবারে অস্বস্তিকর গরম শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে । এমনটাই সতর্কবার্তা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। বেলা দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে না বেরোনই বাঞ্ছনীয় মনে করছেন আবহাওয়া দপ্তর। যদি খুবই বিশ্বাস কোন কাজ না থাকে।

শুধু দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি নয়, উত্তরবঙ্গের মালদা এবং উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এই তিনটি জেলাতেও ” লু ” প্রবাহ থাকবে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং কালিম্পং ছাড়া অন্যান্য সমস্ত জেলাতেই খুবই গরম অনুভব হবে।

সুতরাং এপ্রিল মাসের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ এতটাই বেশি আগামী বছরের তুলনায় তাও আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছেন। একই এপ্রিল কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টি হলেও তারপর প্রায় ১২ দিন দক্ষিণবঙ্গের কোন জেলাতেই বৃষ্টি তেমন কোন কিন্তু হয়নি। আর এই দিকে তাপমাত্রা দিন দিন হু হু করে বেড়েই চলেছে। দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই প্রায় ৪০ ডিগ্রি বা ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা রয়েছে। তাছাড়া বর্তমান যে তাপমাত্রা রয়েছে আগামীকাল থেকেই প্রায় সমস্ত জেলাতেই ১ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা আরো বাড়বে।

এইদিকে আগামী এক সপ্তাহ পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলাতেই বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবনা নাই। যদি বৃষ্টি হয় তাহলেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী হবে অর্থাৎ দৈনিক তাপমাত্রা কমবে। সুতরাং বৃষ্টি না হওয়ার কারণই ( why summer is hot ) বর্তমান হল এই তাপপ্রবাহ। তবে প্রধান যে কারণ তা হলো পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ।

গরমের দাবদাবহ এতটাই থাকবে যে সকাল ১০ টা না বাজতে বাজতে খুবই গরম অনুভব হতে লাগবে। এবং এই গরমের দাবদাবহ চলবে বিকেল চারটা বা পাঁচটা পর্যন্ত। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গরম অনুভব হবে বেলা সাড়ে এগারো বা বারোটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত।

এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের তরফ থেকে ছাতা, সানগ্লাস চশমা, ORS ইত্যাদি বিতরণ করা হয় বিশেষত যারা ট্রাফিকের সঙ্গে যুক্ত ব্যাক্তি তাদেরকে। অর্থাৎ ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক ভলেন্টিয়ার ইত্যাদিদের হাতে। কলিকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েল জানান কলিকাতা পুলিশকর্মীরা যেইভাবে রোডে দাঁড়িয়ে মানুষদেরকে সার্ভিস প্রদান করেন তা অবশ্যই অতুলনীয়, তাই এই খুবই গরমের পরিস্থিতি তারা যাতে ভালোভাবে সার্ভিস প্রদান করতে পারেন তাই তাদের জন্য বিশেষ এই সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা। সুতরাং এই গরমের পরিস্থিতিতে তারা যাতে একটুকু প্রোটেক্ট পায় তাই তাদেরকে এই সমস্ত প্রদান করা হচ্ছে।।

এই গরমের পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের স্কুলগুলিতে ছুটির দিন আগিয়ে নেয়া হয়েছে। যেখানে ২৪ এ মে থেকে গরমের ছুটি দেয়া হতো, সেখানে ২ এ মে থেকে গরমের ছুটি দেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেন। তাই অনেক অভিভাবক বলেন যে তাদের সিলেবাস কিভাবে কমপ্লিট হবে। তাদের পড়াশুনোর প্রতি ইফেক্ট পড়বে। কিন্তু তারাই এও বলছে যে এই গরমের পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের স্কুলে আসা এবং যাওয়া খুবই কষ্টকর। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এও বলা হয়েছে যেন শিক্ষক শিক্ষাগণ যেন এক্সট্রা করে ক্লাস নেন, ছুটির আগে এবং ছুটির পর যাতে করে তাদের সিলেবাস কমপ্লিট করা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার আগে। কিভাবে এই অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া যায় তার সিদ্ধান্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা তার স্থির করবেন । তবে অভিভাবকেরা বলছেন যে সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত আমাদের কেউ মেনে নিতে হবে।

এই গরম দিন দিন যত বাড়ছে ততোই প্রচুর পরিমাণে air condition এবং ফ্যান বা পাখাও দিন দিন প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পুরনো এসি বিক্রির দোকানগুলিতেও ভিড় উপচে পড়ছে পুরনো এসি কেনার জন্য । দোকানদাররাও একথা স্বীকার করছি যে গরম বাড়ার কারণে তাদের বিক্রি ও বাড়ছে। তাদের মতে এ কথাটা ঠিকই যদি বৃষ্টি এবং শীতের প্রবাহ ভালো থাকে তাহলে এসি এবং হ্যান্ড বিক্রি অনেকটাই কম হয়। কেননা মানুষকে গরম লাগলে তবেই তো তারা এইসব জিনিস কিনে নিয়ে যাবে না হলে তারা কেন কিনবে। অর্থাৎ প্রয়োজন হলে অবশ্যই তারা কিনতে আসবে। আর এই প্রয়োজন পড়বে তখনই যখন খুবই গরম পড়বে। তবে সারা দিনের তুলনায় বিকেল থেকে দোকানেতে কিন্তু ভিড় বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। কারণ বিকেলবেলা মানুষ কম রোদের কারণে বাইরে বেরোতে পারে। অর্থাৎ বেলা ১১ টার পর থেকে বিকেল চারটা বা পাঁচটা পর্যন্ত বিক্রি খুবই কম হয়।

রাত এই গরমের পরিস্থিতিতে কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করবেন তা নিম্নরূপ –

  • জল তেষ্টা না পেলেও হালকা হালকা করে জল পান করা। প্রয়োজনে জলের বোতল বা জলের মগ সব সময় কাছে রাখা, যাতে করে প্রয়োজন বোধহয় আপনি খেতে পারেন।
  • বিশেষ প্রয়োজনীয়তা ব্যতীত বাইরে যেন না বেরান। বাইরে যদি বেড়ান তাহলে সব সময় মাথায় টুপি, রুমাল, গামছা ইত্যাদি দিয়ে বেরোবেন যাতে সরাসরি রোদ মাথায় না লাগে।
  • এই গরমের সময় বাড়ির বাইরে ও ভেতরে খুবই হালকা ধরনের ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে থাকতে হবে। বাড়ির বাইরে বেরোলে সাদা রঙের হালকা পোশাক পড়ে বেরোবেন। সঙ্গে একটি ছাতা অবশ্যই নিবেন।
  • রসালো বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন তরমুজ, শসা, কমলালেবু, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল খান। এই গরমে তে মাছ, মাংস, ডিম না খাওয়াটাই শ্রেয় হবে। প্রয়োজনে শাকসবজি খান। বাজারে তেলের তৈরি জিনিস কম পরিবারে খাবেন। অর্থাৎ রিচ যুক্ত খাবার আপনাকে এই গরমে তে কম খেতে হবে। প্রয়োজনে টক দই খাবেন।
  • পাতিলেবু, গুড় বা চিনির শরবত দিনে কমপক্ষে ১ থেকে ১ গ্লাস খাবেন। প্রয়োজনে ORS বা ইলেকট্রোল পাউডারকে ১ লিটার জলে গুলি দুপুরের টাইমে দু-পাঁচ মিনিট ছাড়া ছাড়া দুই থেকে তিন ঘট করে খাবেন খাবেন।
  • শরীর যাতে ঘামিয়ে না যায়, অর্থাৎ ঘামের মাধ্যমে শরীরের জল যাতে বাড়িয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এর জন্য আপনাকে ভারী বিশেষ কোন কাজ করা চলবে না।
  • শরীরে ঘাম অবস্থায়, সেটিকে নিয়ে সরাসরি পাখার বাতাসে বসবেন না তাহলে ঠান্ডা লাগার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শরীরে ঘাম নিয়ে সেটিকে না শুকিয়ে বা না মুছে জলে স্নান করবেন না, না হলে ঘামাচির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ছোট বড় যেই কাজেই থাকুক না কেন সেই কাজ সকাল দশটার আগে কমপ্লিট করার চেষ্টা করবেন। অথবা বিকেল পাঁচটার পর সেই কাজ করার চেষ্টা করবেন।
  • যদি ORS বা ইলেকট্রল বা পাতিলেবুর জোগার নাও হয়, তাহলে জলেতে হালকা পরিমাণ মতো লবণ ও হালকা চিনি মিশিয়ে সেগুলিকে জলেতে গুলি সেই জন মাঝে মাঝেও পান করতে পারেন।
  • সব সময় ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবেন। এমনকি গৃহপালিত পশুদের কেউ ছাউনির মধ্যে সারাদিন রাখবেন। তাদের কেউ পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে দিবেন।
  • যদি কোন ব্যক্তি গরমের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার মাথায় জল ঢালতে হবে, সঙ্গে কোন কাপড় ভিজিয়ে গোটা শরীর ভালোভাবে জল দিয়ে মুছার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *