📝👉 শব্দ দূষণ

উচ্চ প্রাবল্যের ও উচ্চ তীব্র বিশিষ্ট সহনসীমার উর্ধ্বে সুর বর্জিত কর্কষ শব্দ দ্বারা পরিবেশ এবং মানব দেহের শ্রুতিকর ও অবাঞ্চনীয় পরিবর্তনকে শব্দ দূষণ বলে। মানুষের স্বার্থের শ্রুতি সাধন করে অবাঞ্ছিত শব্দ বায়ুতে নির্গত হওয়ার ফলে যে শব্দ সৃষ্টি হয় তাকে শব্দ দূষণ বলে।

noise pollution causes

অর্থাৎ জনজীবন বিপন্নকারী শব্দ বায়ুতে উপেক্ষিত হওয়ার ফলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। জীবনের সুস্থ বিকাশের জন্য সুস্থ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজনীয়। মূলত শহরাঞ্চলের গাড়ির হর্নের তীব্র শব্দ, মাইক ও লাউড স্পিকার এর ব্যবহার, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বাজির শব্দ, মিছিলের শব্দ, মাইকের যথেষ্ট ব্যবহার ইত্যাদি শব্দ দূষণের সৃষ্টি করে।

শব্দ দূষণের ভয়াবহতা একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে স্থায়ী বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে হার্টের ও স্নায়ুর নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশুদ্ধ জল ও দূষণমুক্ত বাতাস জীবনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য পরিবেশের অন্যতম উপাদান এই দুটির আজ অভাব এর সঙ্গে দূষিত হয়ে চলছে শব্দ।

শব্দের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রেখে আমাদের পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় এই রূপ রস শব্দ স্পর্শকারী পরিবেশকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করে। শুধু উপভোগ বা বলি কেন ? অস্তিত্ব কেউ রক্ষা করা যায়, এই ইন্দ্রিয় গুলির মাধ্যমে।

এই পঞ্চায়েতির মধ্যে অন্যতম শ্রবনেন্দ্রিয় বা কান। শ্রাবনেন্দ্রিয়ের সুস্থতা প্রাণীর জীবনের একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু হুল্লোর প্রিয় মানুষদের অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপে পট করে কর্ণ পটায় বিধির্ণ কারী শব্দে, ইলেকট্রিক হর্নের তীব্র আওয়াজ এ , উচ্চ শব্দের মাইক্রোফোন ব্যবহারে , টেপ রেকর্ডার চালানো প্রভৃতিতে শব্দগ্রাহক যন্ত্রের উপর প্রচন্ড আঘাত পড়তে থাকে। শব্দের অত্যাচারজনিত কারণে পরিবেশের এই দূষণই হল শব্দ দূষণ।

রাস্তা দিয়ে সারাদিনই নানান ধরনের যানবাহন যেমন বাস, লরি, মোটর গাড়ি, ট্যাক্সি ইত্যাদি চলাচল করে। দিনে রাত্রে কখনই বিরাম নেই। এত শব্দের মধ্যে না রাতে ভালো করে ঘুমানো যায়, না দিনের বেলা ভালো করে পড়াশোনা করা যায় বা ঘুমানো যায়। প্রতিদিন যে পরিমাণ শব্দের মধ্যে থাকে সেটাই শারীরিক অসুস্থতা ও বিরক্তির প্রধান কারণ। মাত্রাতিরক্ত ও অযাচিত শব্দ কখনোই স্মৃতি মধুর হয় না। বরং তার সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রকৃতিতে কত ধরনের শব্দই না হয়। আসলেই শব্দ যখন মানুষের পক্ষে অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তি কর হয় তখনই তা দূষণের সৃষ্টি করে।

সাধারণত দেখা যায় ৬৫ ডেসিবেলের বেশি জোরে শব্দ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর নানা শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা হয়। শব্দের তীব্রতা মাপার একক হল ডেসিবেল। যে যন্ত্রের সাহায্যে তা মাপা হয় তার নাম ডেসিবেল মিটার। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের মানুষের উপর শব্দ দূষণের প্রভাব অনেক বেশি। শহরের যেমন যানবাহনের সংখ্যা বেশি তেমনি কোলাহলের পরিমাণও অনেক। যার ফলে শহরের মানুষের মধ্যে শব্দ দূষণের কারণে শারীরিক অসুস্থতার হারও অনেক বেশি।

নিম্নে আতশবাজির কারণে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে অর্থাৎ আতশবাজির কি কুপ্রভাব পড়তে পারে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

📝 👉 আতসবাজির ফলে সমস্যা ( noise pollution causes )

শ্রবণ যন্ত্রের ওপর প্রভাব – আজকাল দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ১০০ ডেসিমেল শব্দের মধ্যে কাটালে বধিরতা দেখা দেয়। কারণ ১০০ ডেসিমেল শব্দের ফলে অন্তরকর্নের অর্গান অফ কর্টির যা শ্রুতি যন্ত্র হিসেবে পরিচিত তার কোর্সগুলি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ১৬০ ডেসিবেল মাত্রার বিকট শব্দের ফলে কানের পর্দা ছিঁড়ে যায়। ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে পড়ে। এই বোমাবাজির ফলে মানুষ কানে খুব কম শুনতে পায়। অনেকে আবার একেবারে শুনতে পাই না। ফলে পরিবেশে বধিরের প্রভাব বেড়েই চলছে। ফলে বোমাবাজিতে শ্রবণ যন্ত্রের ওপর গভীর প্রভাব বেড়েই চলছে।

মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব – আজকাল বোমাবাজির প্রভাব বেড়েই চলছে। যন্ত্রণাদায়ক শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র তথা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। বিকট বোমাবাজির ফলে মাথা ধরে থাকে, শরীরে বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কারো কারোর মধ্যে বমিভাব ও খিচুনি ভাব দেখা যায়। বিভিন্ন প্রকার কাজেও একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় অনিদ্রা ও শুরু হয়। আতশবাজির শব্দের ফলে স্বয়ংক্রিয় নার্ভ তন্ত্রের ক্রিয়া ও ব্যাহত হয়। বৌমার শব্দে মস্তিষ্কের ওপর গভীর প্রভাবের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার শ্রুতি হয়ে যায়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুই মনে রাখতে পারে না এবং মানুষের হাঁটতে চলতে অসুবিধা হয়।

হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব – দীর্ঘস্থায়ী বিকট আওয়াজ মানুষের হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এতে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় বা কমে যায়। অনেক সময় রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হাড়স পায়। রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা হাশ পাই বা রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। শব্দ দূষণের ফলে অনেক সময় ধমনীর রক্তের চাপও বেড়ে যায়। সুতরাং এই বোমা বাজি শব্দ দূষণের ফলে মানুষের হৃদ রোগাক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেছেন।

চক্ষুর উপর প্রভাব – বোমাবাজির ফলে আরেকটি বিশেষ ত্রুটিহীন প্রভাব হল চক্ষু। মানুষের অনেক সময় এই শব্দ দূষণের ফলে দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় এই শব্দ দূষণের ফলে চোখের তারারন্দ্রের প্রসারন ঠিকমতো হয় না। এই বাজে পটকা রংবেরঙের আলোর ফলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। মানুষ তখন পাগলের মতো হয়ে যায়। মানুষ তখন নিজেকে অসহায় মনে করে।

পরিবেশের ওপর প্রভাব – শব্দ দূষণের ফলে বহু প্রাণী ও পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারেনা। ফলে ওই পাখিও প্রাণীর নতুন অকথ্য পৃথিবীতে আসে না। ফলে পরিবেশের বাস্তরীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এবং তার প্রভাব মানুষের মধ্যেও পড়ে। শীতের দেশের পাখিরা এ ধরনের দূষণের ফলে খুব কম পরিমাণে বর্তমানে আমাদের দেশে আসে। বিভিন্ন প্রকার বিকট শব্দ মানুষের বাসস্থানে ফাটল ধরায় দরজা জানালার ক্ষতি করে। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বাধ্য হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

সামাজিক প্রভাব – শব্দ দূষণ মানব স্বাস্থ্যের ওপর গভীরভাবে প্রভাব পড়ছে। কোন পূজা পার্বণ বা বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে বা রবীন্দ্রজয়ন্তী বা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যখন মাইক বাজানো হয় বা বাজি ফাটানো হয় তখন এই বাজির শব্দ থেকে শব্দ দূষণ হয়।

👉 উপসংহার

শব্দ মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি। কিন্তু সেই শব্দই আজ দানব হয়ে ধ্বংসের করাল নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাই এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে প্রত্যেক মানুষকেই আজ সচেতন হয়ে অনর্থক শব্দ সৃষ্টির প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে শব্দ দূষণের প্রতিরোধ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এই শব্দ দূষণ জনিত সমস্যা থেকে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভবকর হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকার আইনগত উদ্যোগ নিয়েছেন। এই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট পাঠক্রম রচনা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ উন্নত ধরনের প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজে বিভিন্ন কমিশন বিশেষ করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ উদ্যোগ নিয়েছে। সর্বোপরি মানুষের সচেতনতা বোধ না থাকলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার কিছুতেই সম্ভবপর নয়।

📝👉 FAQ of noise pollution causes

Q) এক কথায় শব্দ দূষণ কি ?

যখন শব্দ তার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় অর্থাৎ কোন প্রাণীর শব্দ ধরনের যে ক্ষমতা তার থেকে শব্দ যখন বেশি হয় তাই শব্দ দূষণ হিসেবে পরিচিত। সাধারণত ১০০ ডেসিবেল এর ওপরে যদি আওয়াজ হয় তা শব্দ দূষণ হিসেবে গণ্য হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *