Causes of noise pollution – এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন শব্দ দূষণের প্রকৃতি গুলি কি কি। কি কি কারণে শব্দ দূষণ হয়। এর কুফল কি কি রয়েছে।
শব্দ দূষণের প্রকৃতি
শব্দদূষণের যে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা তা অনস্বীকার্য। বাংলায় একে হট্টগোল আখ্যা দেয়া যায়। অপ্রীতিকর, অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দই হলো হট্টগোল। হট্টগোলের প্রকৃতি নানারকম। এটি অনবরত হতে পারে। আবার থেমে থেমে অথবা খুব জোরেও হতে পারে। পরিচিত হট্টগোল থেকে অপরিচিত হট্থ অনেক বেশি অপ্রীতিকর। শব্দ দূষণের প্রভাবে মানুষের নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক রোগের সম্মুখীন হয়। এই শব্দ দূষণের ফলে মানুষের স্মরণ শক্তি চিরতরে বা চিরদিনের মত নষ্ট হয়ে যায়। স্বার্থের ক্ষতি হয় । এই শব্দ দূষণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- শব্দদূষণের প্রভাবে শ্রবণ ইন্দ্রের শ্রুতি।
- শব্দ দূষণের প্রভাবে অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি।
১) শব্দ দূষণের প্রভাবে শ্রবণ ইন্দ্রের শ্রুতি
শব্দ দূষণের প্রভাবে শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের বিভিন্ন রকম শ্রুতি সাধন হয়। যেমন ৭০ ডেসিবেল মাত্রার কাছাকাছি সব শ্রবন ইন্দ্রের অবসানে সৃষ্টি করে। অবসানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হলে তাকে বলা হয় কম্পাঙ্ক। এর মাত্রা হলো চার হাজার ডেসিবেল। এই ধরনের প্রভাবে আমাদের শ্রবণশক্তি হারিয়ে যায়। যেমন-
বধিরত্ব :- শব্দ দূষণের প্রভাবে শ্রবণ ক্ষমতা একেবারে লোক পেয়ে যেতে পারে। বহুদিন ধরে শব্দ দূষিত আকারের মধ্যে থাকলে, ধীরে ধীরে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং মানুষের মেজাজ খিটখিটে আকার হয় অর্থাৎ মানসিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়।
২) শব্দ দূষণের প্রভাবে অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক শ্রুতি
শব্দ দূষণের প্রভাবে যে শারীরিক ও মানসিক শ্রুতি করে সেগুলি হল নিম্নরূপ –
শ্রাবণের বাঁধা – আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শব্দও শ্রাবণ ভাষার মাধ্যমে আমরা আদান-প্রদান ও যোগাযোগ রক্ষা করি। কথা বলার সময় বা শোনার সময় অন্য কোন শব্দ উপস্থিত হলে আমাদের কথা বলতে অসুবিধা হয়।
বিরক্তি – অতিরিক্ত শব্দদূষণ বিরক্তি সৃষ্টি করে। মানুষের মন মেজাজ ও আচরণের অস্বাভাবিকতা ও মানসিক উত্তেজনার লক্ষ্য করা যায়।
কর্মদক্ষতা – শব্দ দূষণের প্রভাবে মানুষের ক্লান্তি বোধ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন পেশায় যারা নিযুক্ত আছেন শব্দ দূষণের প্রভাবে তাদের মানসিক অবসরে বা কাজে অনীহা সৃষ্টি করে। যারা মানসিক কাজ করে তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। একসময় কানে শোনার ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোক পেতে পারে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষ তার জ্ঞান, স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে বমি বমি ভাব, মাথা ঝিমঝিম করে ইত্যাদি। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। বহুদিন ধরে শব্দ দূষণের প্রভাব থাকলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। হৃদপিন্ডের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে এর ফলে হৃদ স্পন্দনের পরিবর্তন হয় এবং রক্তচাপের পরিবর্তন হয়।
শব্দ দূষণের কারণ ( effects of noise pollution )
যানবাহন – শব্দ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হলো যানবাহন। বিভিন্ন যানবাহন হর্নের তীব্র আওয়াজ শব্দ দূষণের একটি কারণ। জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলে যানবাহনের পরিমাণ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যানবাহন থেকে শব্দ দূষণ ও দিনের পর দিন বাড়ছে। ট্রাক, মোটর, বাস, রেল, এরোপ্লেন চলাচলের সময়ে যে শব্দ সৃষ্টি হয় তা শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে। ভঝথ এর রিপোর্ট অনুসারে ট্রাফিক শব্দ হলো বায়ু দূষণের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক দূষণ কারক। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা CPCB বা Central pollution control board যানবাহন জনিত শব্দ দূষণ মাত্রা ৭০ ডেসিমেল নির্ধারণ করলেও, বহু শহরে শব্দের মাত্রা অনেক বেশি।
বাজি – বাজির তীব্র আওয়াজ ব্যাপক বায়ু দূষণ সৃষ্টি করে। বাজির বিস্ফোরণের শব্দের প্রভাবে মানুষের অন্তঃকর্মের কোকলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। একে অ্যাকাউস্টি কট্রমা বলে।
শিল্প – বিভিন্ন কল কারখানাতে যন্ত্রের আওয়াজ শব্দ দূষণের একটি অন্যতম কারণ। শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারখানা হল। ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি তৈরীর কারখানা, টেক্সটাইল লুম, নিউজ পেপার প্রেস, গাড়ি সারাই কারখানা ইত্যাদি। বিভিন্ন কারখানা দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে সৃষ্টি আওয়াজ মারাত্মক শব্দ দূষণ ঘটায়। ভারতের শিল্প ক্ষেত্রে আট ঘন্টায় গড়ে সর্বাধিক ৯ গগ শব্দ সমান মাত্রা বলে নির্ধারিত।
কিন্তু জাহাজ, বিমান নির্মাণ, কাঠের মিল, খাদ্য উৎপাদন শিল্প, আসবাব নির্মাণ শিল্প, এই সহনমাত্রার থেকে অনেক বেশি প্রাবল্যের শব্দ উৎপন্ন হয়। এর ফলস্বরূপ মারাত্মক শব্দ দূষণ ঘটে। এছাড়াও বর্তমান কালে শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ হলো শব্দবাজি ও লাউড স্পিকারের অযাচিত ব্যবহার। আবার প্রাকৃতিক কারণ যেমন বজ্রবিদ্যুৎ শব্দ দূষণ ঘটায়।
যন্ত্র – বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যেমন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিজেল জেনারেটরের প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন বিকট আওয়াজ শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে। এছাড়া রেডিও, টিভি এবং লাউড স্পিকার এর শব্দও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শব্দ দূষণ ঘটায়।
শব্দ দূষণের কুফল ( causes of noise pollution )
শব্দ দূষণের ফলে শরীরে যে শ্রুতি হয় তা অপূরণীয়। অবাঞ্চিত শব্দ কারখানায় শ্রমিকের কার্যক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যানবাহনের দুর্ঘটনা হয় হরতালের জন্যও বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড সিং হিউজ এর মতে অপ্রীতিকর শব্দ যদি একজন কর্ম ক্লান্ত মানুষকে দীর্ঘক্ষন ও দীর্ঘদিন ধরে শুনতে হয়, তাহলে তার মধ্যে গুরুতর মানসিক অসুস্থতা, এমনকি আক্রমণাত্মক মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। আজকের দিনে অতিরিক্ত মদ্যপান, নেশার ঔষধ গ্রহণ এবং ঘুমের ঔষধ গ্রহণের জন্যও হট্টগোল আংশিক ভাবে দায়ী। অনিদ্রা এবং মানসিক ভঙ্গুরতা এর জন্য সৃষ্টি হতে পারে।
হট্টগোলের জন্য হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যেসব শ্রমিককে অনবরত হট্টগোলের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাদের রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ছে। হট্য গোল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কে আহত করে। এর ফলে পেপটিক আলসার, হাঁপানি এবং এগজিমা জাতীয় চর্ম রোগের প্রকোপ বাড়ে মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীরাও হট্টগোলের স্বাস্থ্য হানি ঘটে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
নিজস্ব মতামত
দীপাবলীর সময় শব্দ দূষণের ফলে যে সমস্ত রোগ হয় তাহলে শ্রবণ ইন্দ্রের ক্ষতি, মস্তিষ্কের ক্ষতি, হৃদ যন্ত্রের ক্ষতি, এবং চক্ষুর ওপর প্রভাব নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে মানুষ মারাও যায়। তাই শব্দ দূষণের মাত্রা কমাতে হবে। এবং শব্দদূষণ অতিরিক্ত মাত্রায় যাতে বেশি না ঘটে তার জন্য সরকারকে আইনত পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং শব্দ দূষণকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ইয়ার প্লাগ ও ইয়ার মাফ ব্যবহার করতে হবে।