effects of noise pollution – এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন শব্দ দূষণের ফলাফল গুলি কি কি এবং শব্দদূষণের জন্য কি কি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
👉 শব্দ দূষণের ফলাফল ( effects of noise pollution )
মানুষের উপর প্রভাব
শব্দ দূষণ মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা ও হৃৎপিণ্ডের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
কানের ওপর প্রভাব – দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দ অর্থাৎ ১০০ ডেসিবেল এর উপরের কারণে অর্গান অফ কোর্টি বাসন্তী যন্ত্রের লোমকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায় বা বিনষ্ট হয়। একে নয়েজ ইন্ডিউজড লস বা NIHL বলে। NIHL দুভাবে মানুষের ক্ষতি করে –
- অতি উচ্চ প্রাবল্যের শব্দ এককালীন আচম্বিতে শুনলে অন্তঃকর্মের ককলিয়া অংশের স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। একে একাউষ্টিক ট্রমা বলে। যেমন ১৫০ ডেসিবেলের উর্ধ্বে কোন শব্দ। বিশেষত বাজির বা বিস্ফোরণের শব্দ।
- সাধারণত শব্দের থেকে উচ্চ প্রাবল্যের কোন শব্দ বিশেষত ৮৫ ডেসিবেল শব্দ অনবরত শুনতে থাকলে শ্রবণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব – মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীরাও জোর শব্দ সহ্য করতে পারে না। শব্দের আওয়াজ প্রাণীদের বিরক্তির কারণ হয়। এরা ভয় পায় এবং অন্যরকম আচরণ করে। কুকুর, বিড়াল সামান্য পটকার শব্দেও ভয় পায়। জোর আওয়াজ অনেক সময় এদের বধীরের কারণ হয়ে যায়। বন্যপ্রাণীরা শব্দ দূষণের ফলে মানুষের থেকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্ণপরিবেশ অতিরিক্ত শব্দ বা কোলাহল সৃষ্টি হলে বন্যপ্রাণীরা স্বীকার বা শিকারিকে চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে তারা অনেক সময় মৃত মুখে পতিত হয়।
অতিরিক্ত শব্দ দূষণ হলে তারা শব্দের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেনা। বিশেষ করে প্রযোজন ঋতুতে তারা সঙ্গের ডাক শুনতে না পারার জন্য প্রজননে ব্যর্থ হয়। সাধারণত বন্যপ্রাণীদের শ্রবণ ক্ষমতা মানুষের থেকে অনেক বেশি। বাড়িতে পোষা কুকুর, বিড়াল বা পাখিরা শব্দ দূষণের ফলে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। শব্দ দূষণ ছাড়াও অন্য প্রাণীর ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন –
- বধিরতা ৮৫ ডেসিমেল এর ওপরে শব্দ হলে তা প্রাণীদের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস করে।
- প্রযোজনায় বাধা শব্দ দূষণের ফলে বহু প্রাণী এবং পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারে না। ফলে ওই প্রাণী ও পাখির নতুন অপত্য সৃষ্টিতে বাধা পায়।
- ভ্রুনের বৃদ্ধি হ্রাস ইন্দুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চ শব্দের বোনের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
👉 শব্দ দূষণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রণ
শব্দ দূষণ তিন ভাগে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- প্রযুক্তিগত উপায়ে
- আইনগত উপায়ে
- ব্যক্তি বা জনসংখ্যার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ
১) প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ
প্রযুক্তিগত উপায়ে যে যেভাবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- কারখানা বা শিল্প সংস্থায় উৎপন্নকারী শব্দ, যন্ত্রপাতিগুলি প্রযুক্তিগত উৎপাদন ঘটানো শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- যে সমস্ত জায়গায় 40 ডেসি বেলের বেশি শব্দ সৃষ্টি হয়, সেখানে এই শব্দ প্রতিরোধ করার জন্য ইয়ারফোন ব্যবহার করা দরকার।
- যে সমস্ত জায়গায় প্রচন্ড শব্দ হয় সেখানে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিরোধ এলাকা তৈরি করা প্রয়োজন।
২) আইনগত উপায়ে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালতে দরকার মতো অন্যান্য এলাকাগুলিতে বঞ্চিত শব্দ আইন করে বন্ধ করা দরকার। এই বিষয়ে শব্দ দূষণ আইন ১৯৮১ সালে সুনিদৃষ্ট এলাকার জন্য ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি ক্ষেত্রে দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করতে হবে। আইন অনুসারে একে লাইসেন্স জোন বলা হয়।
৩) ব্যক্তি বা জনসংখ্যার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ
- রাস্তার দু’পাশে গাছপালা লাগিয়ে শব্দ দূষণের মুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে হবে।
- মোটরসাইকেল বা স্কুটার ইত্যাদি মাল বহনকারী গাড়ি তাদের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করলে এবং সঠিক আইন মেনে হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
- বিয়ে বাড়ি বা জন্মদিন বা যেকোনো অনুষ্ঠানে ৬৫ ডেসিবেল এর নিচে মাইক চালালে তাহলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
👉 অন্যান্য শব্দ দূষণের প্রতিকার
- সবচেয়ে ভালো হয় যদি শব্দ যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে তা শব্দ বিরোধী দেওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা যায় বা সাইলেন্সার লাগানো যায়।
- শব্দের উৎস ও শ্রোতার মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে হলে, স্কুল ও হসপিটাল ও বাড়ির চারিদিকে গাছ লাগালে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ গাছপালা তীব্র শব্দ শোষণ করতে পারে।
- অকারণে হর্ন বাজানো, উচ্চস্বরে রেডিও লাউডস্পীকার বাজানো, টিভি চালানো উচিত নয়।
- কানে তুলে দিয়ে, ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করে শব্দের আওয়াজ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সিনেমা বা অডিটোরিয়াম হলে শব্দের তীব্রতা কামনা যন্ত্র লাগানো থাকে।
- শহরের নকশা এমন ভাবে তৈরি করা দরকার যাতে কলকারখানা, হাইওয়ে মানুষের বসবাসের অঞ্চল থেকে দূরে থাকে।
- যেহেতু শব্দ দূষণ ব্যাক্তি, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করে তাই সরকারি স্তরে কঠোর আইন হওয়া প্রয়োজন।।
👉 আরও প্রতিকার মূলক ব্যাবস্থা
দীপাবলিতে জনগণকে বাজি ফাটানো থেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে – আজকাল দীপাবলিতে শব্দ বাজি পড়ানো বেড়েই চলেছে। এতে মানুষের বিভিন্ন প্রকার রোগ জ্বালাতো বেড়েই চলেছে। কেউ কানে কম শুনে অথবা কেউ বা শুনতে পায় না। তাই যাতে আর শ্রুতি না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকে যথেষ্ট কম পরিমাণে বাজী পোড়াতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ কোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই দীপাবলিতে জনগণকে বাজি ফাটানো বন্ধ রাখতে হবে।
জনসংখ্যার মাধ্যমে বাজি ফোটানো নিয়ন্ত্রণ করা – বিভিন্ন প্রকার গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রচারের দ্বারা শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করলে, শব্দ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়। আতশবাজি পোড়ানো বা পটকা ফাটানো বন্ধের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করলে, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানে বোমাবাজি ফাটানো নিয়ন্ত্রণ রাখা – আজকাল প্রায় সব অনুষ্ঠানে বোমাবাজি ফাটানো হয়। এই বোমাবাজি মানব জীবনের ওপর খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। যেমন কোন পূজা পার্বণ বা বিয়ে বাড়ি, এবং মুখে ভাত উপলক্ষে বা রবীন্দ্রজয়ন্তী, অথবা নজরুল জয়ন্তী বা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে বাজি পোড়ানো হয়। তখন এই বাজির শব্দ থেকে শব্দ দূষণ ঘটিয়ে থাকে। যদি এইসব অনুষ্ঠানে বাজি যথেষ্ট কম পরিমাণে পোড়ানো হয় তাহলে সমাজ ও প্রকৃতি সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। যাতে সমাজ ও প্রকৃতির কোন ক্ষতি না হয়, তার দায়িত্ব জনগণকে নিতে হবে।
শব্দ দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইয়ার প্লাগ ও ইয়ার মাফ ব্যবহার করা – আজকাল এই শব্দ দূষণের ফলে বেশি শ্রবণ যন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। তাই যেখানে বেশি শব্দ দূষণ হয় সেখানে গেলে বেশি প্রতিরোধক ইয়ার প্লাগ বা ক্যানেল কাপ বা ইয়ার মাপ ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে শব্দ দূষণ ওইসব মানুষের ওপর তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। এই শব্দ প্রতিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করলে শব্দ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও আসতে পারে। এবং মানুষ এইসব দূষণের হাত থেকে বাঁচতে পারবে।
পরিবেশগত উপায়া শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ – পরিবেশগত উপায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গাছপালা শব্দ শোষণ করতে পারে তাই শহরাঞ্চলে রাস্তার দু’ধারে গাছপাড়া লাগিয়ে শব্দ দূষণ রোধ করা যায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে তেঁতুল, বট, অশোক, নিম, নারকেল, দেবদারু প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি মাত্রায় শব্দ শোষণ করে।
এছাড়া – কলকারখানায় অবাঞ্ছিত শব্দের জেনারেটর দূরে বসাতে হবে। শব্দ দূষণ কমানোর জন্য কল কারখানায় পুরনো যন্ত্রপাতি ঠিক সময়ে বদলাতে হবে। যে সমস্ত কারখানায় ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ সেগুলির কর্মচারীদের কে এয়ার মাফ ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মাঝে শ্রমিকদের শ্রবণশক্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা কারখানায় রাখতে হবে।
এছাড়া কলকারখানায় চার পাশে গাছপালা লাগালে শব্দ শোষিত হবে। কাজের জন্য সবুজ ও শান্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে। শুধু তাই নয় রেল স্টেশন ও এরোড্রাম অবাঞ্ছিত শব্দ নিবারণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
যাইহোক উপরিউক্ত যে সমস্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলির কথা বলা হয়েছে। সেগুলিকে সঠিকভাবে কার্যকর করার জন্য। সর্বপ্রথম জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণ যখন নিজে সচেতন হবে তখনই সে উপরেোক্ত প্রতিকারমূলক পদগুলিকে বেছে নিবে। এর জন্য বিভিন্ন জায়গায় সভা সমিতি করতে হবে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম জাগ্রত হতে হবে ছাত্র সমাজকে ও বিভিন্ন ধরনের ক্লাব ও ইউনিয়নগুলিকে।