Eco systems impacts coastal zone – পশ্চিমবঙ্গের একটি উপকূলবর্তী অঞ্চলের ইকো-সিস্টেম ও তার উপর মানুষের প্রভাব নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা ০.৪২ মিলিয়ন হেক্টর ও তা ২২০৬ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। ৩৫০ কিমি জুড়ে রয়েছে কর্দমাক্ত উপকূল যার মধ্যে হ্যালোফাইটিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। কেবলমাত্র ৪০ কিমি অংশ বালুকাময় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল, যা মেদিনীপুর জেলায় নতুন দিঘা থেকে হুগলি নদীর মোহনা এবং পূর্বে খেজুরি ও হলদিয়া এবং তমলুক পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রধানত দীঘাঞ্চলে বালুকাময় সমুদ্র সৈকত গড়ে উঠেছে এবং এটি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাক ওয়াটার, লেগুন অগভিরিও জলাশয় রয়েছে। জোয়ার ভাটা এবং উপকূলীয় বায়ু সেখানকার ফসল ও জীবনযাত্রার উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এটি রাজ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থকারী পর্যটন কেন্দ্র। বর্তমানে অতিরিক্ত মানুষের আগমন ও সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বালুকাময় সমুদ্র সৈকত অঞ্চলকে ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে অঞ্চলটির ভৌগোলিক গুরুত্ব ও তার ওপর মানুষের প্রভাব দিয়ে একটি পর্যালোচনা করা হল।

👉 প্রকল্পের উদ্দেশ্য

  • বৈচিত্র্যময় জীবের আবাসস্থল তৈরির জন্য দায়ী ভৌত ও রাসায়নিক বিষয়গুলি পর্যালোচনা করা।
  • সমুদ্র সৈকতে মানুষের প্রভাব নির্ধারণ করা।
  • উপকূলীয় বাস্তু সংস্থানে পর্যটনের গুরুত্ব নির্ধারণ করা।
  • প্রজাতি সমৃদ্ধি, বাস্তুতন্ত্রের স্বতন্ত্রতা রক্ষা, জীব বৈচিত্রের মূল্যায়ন করা এই আর্টিকেল বা প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

👉 গবেষণা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ

গবেষণা এলাকাতে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ – আমরা প্রকল্প রূপায়ণের জন্য দীঘা অঞ্চলকে বেছে নিয়েছি যা উপরের ভূমিকা দেখেই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আমি নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে দীঘা উপকূলবর্তী এলাকায় পৌঁছে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নোটবুকে তুলে রাখলাম। এবং ক্যামেরার সাহায্যে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ছবি তুলে রাখলাম। যা আপনাদের কেউ এই কাজ গুলি করতে হবে।

গবেষণাকৃত এলাকার সম্বন্ধে গৌণ তথ্য সংগ্রহ – যেই জায়গাটিকে কেন্দ্র করে গবেষণা করা হবে তার সম্পর্কে অন্যান্য নানান তথ্য বিভিন্ন ধরনের বই, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, ইত্যাদি থেকে ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও তার উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হল। আপনারাও উপযুক্ত বিভিন্ন সোর্স থেকে গবেষণাকৃত এলাকার সম্বন্ধে নানান তথ্য সংগ্রহ করবেন।

👉 সার্ভে অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান –

  • কলেজ থেকে সার্ভে অঞ্চলের দূরত্ব নির্ভর করে উল্লেখ করা।
  • যেই জায়গাকে কেন্দ্র করে গবেষণা করা হবে সেই অঞ্চলের দ্রাঘিমাংশ হল ২১ ডিগ্রি ৩৬ সেকেন্ড উত্তর এবং অক্ষাংশ হল ৮৭° ২৯ সেকেন্ড পশ্চিম।
  • অঞ্চলটির গড় উষ্ণতা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • এবং গবেষণাকৃত অঞ্চলটির গড় বৃষ্টিপাত ১৭৫০ মিলিমিটার।

👉 বিভিন্ন ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন তথ্য

সমুদ্রসৈকতবালিয়াড়ির সামনের অংশবালিয়াড়ির পেছনের অংশ
অঙ্গসংস্থানঢালো, বিশেষত দুই থেকে তিন মিটার উঁচুঢাল যুক্ত বিশেষত সাত থেকে 13 মিটার উঁচুঢাল যুক্ত বিশেষত ছই থেকে ১২ মিটার উচ্চ
উদ্ভিদের নাম ও প্রকৃতিলতানো উদ্ভিদ
( Epomoea sp. )
গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ – pandanus sp. , Opuntia sp. , Calotropis sp. , Datura sp. ,
বৃক্ষ – Azadirachta , India Casuariana sp. , Acacia sp. ,
গুল্ম – pandamus sp. , Opuntia sp. , Lantana camara
উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যউদ্ভিদ গুলি বিশেষত বালির ওপর জন্মায়, লবণাক্ত অঞ্চল এবং বায়ুপ্রবাহ যুক্ত অঞ্চলে জন্মেয়ে থাকে।এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অধিক বায়ুপ্রবাহ যুক্ত অঞ্চল এবং মৃত্তিকায় অতিরিক্ত আদ্রতা যুক্ত এলাকায় জন্মে থাকে।এই এলাকার উদ্ভিদ গুলি বিশেষত কম বাই প্রবাহ যুক্ত অধিক ছায়া যুক্ত অঞ্চলে জন্মে থাকে।
প্রাণীদের নামএই অঞ্চলে যে সমস্ত প্রাণীগুলি দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাপ, ইঁদুর, কাঁকড়া, সিয়রচিন, এবং অন্যান্য কিছু সরীসৃপ প্রাণী।বালিয়াড়ির সামনের এলাকায় কিছু সাপ ও কিছু সরীসৃপ প্রাণী লক্ষ্য করা যায়।এই অংশে তেমন কোন বিশেষ প্রাণী পরিলক্ষিত হয় না
অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যলবণাক্ত অঞ্চলে তৈরি হওয়ার জন্য বিশেষ উপযোগী।বাসস্থান ধ্বংস হওয়ার জন্য বালিয়াড়িগুলির সামনের অংশ প্রায় ধ্বংসের মুখে।মানুষের শ্রেষ্ঠ নির্মাণ ও কাজের জন্য বসতি ধ্বংসপ্রাপ্ত।

👉 সমস্যা

  • স্থানীয় মানুষদের দ্বারা উপকূল অঞ্চলে যথেষ্ট প্লাস্টিক ব্যবহার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
  • স্থানীয় নর্দমার ও প্রয়োগ প্রণালীর জল সরাসরি সমুদ্রে এসে মিশছে। যা সামুদ্রিক পরিবেশের জীবজন্তুর ক্ষতিসাধন করেছে।
  • পর্যটকদের দ্বারা অববাহিত বজ্র পদার্থ সমুদ্র তীরে জমা হচ্ছে।
  • উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত জলধারা গুলিতে আবর্জনা পড়ে জল দূষিত করেছে, যা পরে বৃষ্টির জলে ধৌত হয়ে সমুদ্রে মিশছে।
  • সমুদ্রে পড়ে বিভিন্ন মানুষের সৃষ্ট গঠনমূলক কাজের কারণে, গাছপালা ও প্রাণী গোষ্ঠীর ক্ষতি হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে বিপদজনক।

👉 সমাধান

  • সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের এই অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব ও আর্থসামাজিক প্রভাব সম্বন্ধে অবগত করতে হবে।
  • পর্যটকদের ও স্থানীয় মানুষদের জন্য নির্দিষ্ট বর্জ্য পদার্থ ফেলার জায়গা তৈরি করতে হবে, ও তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় যেকোনো রকম গঠনমূলক কার্যকলাপের জন্য একটি রূপরেখা নির্ধারণ করতে হবে।

👉 নিজস্ব মতামত

দিঘা ও তার উপকূলবর্তী অঞ্চল এই রাজ্যের একটি বিশেষ সম্পদ। এবং যার জন্য আমরা সকলেই গর্ববোধ করি বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা। এই এলাকার অধিবাসী এবং পর্যটকদের কাছ থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বাস্তব পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ এর মাধ্যমে দীঘাঞ্চলকে পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত সবার সহযোগিতায় এই অঞ্চল সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *