natural disaster types – ১৭৩৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায়, কি কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছিল, তার ফলে মানুষজনের কি রকম কি ক্ষতি হয়েছিল জানুন।
ভূমিকা
পশ্চিমবঙ্গ পূর্বাঞ্চল গুলির একটি রাজ্য যা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জনবহুল সাফ জাতীয় সংস্থা ( ভারতের আদমশারী ১৭ এপ্রিল, ২০০৯ সংশোধিত অনুযায়ী ) এবং ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম জনবহুল রাজ্য। এই রাজ্যের বিভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক বৈচিত্রের জন্য ঘূর্ণিঝড় খরা ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে গেলে প্রথমে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের শনাক্তকরণ করা প্রয়োজন। বর্তমান এই প্রকল্পে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তার শ্রেণীবিন্যাস ও তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সমুহ
- বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা।
- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ লিপিবদ্ধ করে উপস্থাপন করা।
- ঘটে যাওয়া দুর্যোগ গুলি সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তৈরি করা।
- দুর্যোগগুলি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা অনুধাবন করা।
পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ( natural disaster types ) বিবরণ নিম্নরূপ
১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দের দুর্যোগ – ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা জুড়ে ভূমিকম্প দেখা দিয়েছিল। এর ফলে প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছিল।
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ – এই সালে উত্তরবঙ্গ জুড়ে বন্যা ও ভূমিকম্প দেখা দিয়েছিল। এই দুর্যোগের ফলে তিস্তা নদীর জলপথের পরিবর্তন ঘটেছিল এবং ওই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের প্রভুত ক্ষতি হয়েছিল।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ – এই বছর মেদিনীপুর জেলা জুড়ে সাইক্লোন নামে একটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। যার ফলে প্রায় ১০ হাজারের মতো মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছিল।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে সাইক্লোন ভোলা নামে একটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন ঘটেছিল। এবং গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছিল।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ – ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে খুব বড় একটি বন্যা হয়েছিল। যা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি বেশি প্রভাবিত হয়েছিল। এই বন্যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ বিশেষ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ – এই বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণবঙ্গের মেদিনীপুর, হাওড়া, ২৪ পরগনা, হুগলি, প্রভৃতি জেলাগুলি জলমগ্ন হয়ে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এরফলে স্থানীয় মানুষেরা বিশেষ বিশেষভাবে ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছিল।
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ – এই সালে কলিকাতা বর্ধমান এবং বীরভূম জুড়ে সাইক্লোন ঝড় ও বন্যা পরিলক্ষিত হয়েছিল। যার ফলে এই ক্রান্তীয় সাইক্লোনের জন্য পনেরশোটিরও বেশি গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, এবং বিস্তীর্ণ এলাকায় জলমগ্ন হওয়ার কারণে এলাকাগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০০৫ খ্রিস্টাব্দ – এই বছর পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলিতে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এই বন্যার কারণে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার প্রায় তিন হাজারের মতো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ – এই সালে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা সাইক্লোন বা আইলা ঝড়ের কবলে পড়েছিল। যার ফলে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০২০ খ্রিস্টাব্দ – এই বছর করুনার মহামারীতে যখন সারা বিশ্ব ভুগছিল। সেই সময়ে ২০২০ সালে আছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আমফাম। এই ঘূর্ণিঝড় দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, কলিকাতা, হাওড়ায় , হুগলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। এই ঝড়ের কবলে বাংলাদেশকেও পড়তে হয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ মিলে প্রাই সাড়ে তিন কোটির মত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বন্ধ করতে পারা সম্ভব নয়, এটা ঠিকি কথা। তবে তার প্রভাব গুলির রাজ ও দুর্বলতার মাধ্যমে দুর্যোগের তীব্রতা অনেকটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এই সম্পর্কে কিছু ব্যবস্থাপনা নিম্নে উল্লেখ করা হল –
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব হ্রাস করে গতির প্রভাব কমানো যায়।
- ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য সহায়তা কেন্দ্র গঠনের মাধ্যমে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সম্ভব যা চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তা, পুনর্নির্মাণ ইত্যাদি প্রদান করবে।
- দুর্যোগ গ্রস্থ মানুষদের বাজার বীমা, স্বসুরক্ষার যোজনা, ইত্যাদি প্রদান করে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রধান করা।
- উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা সঠিক সময়ে প্রদান করলে তা বিপর্যয়ের প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা যেতে পারে।
পরিশেষ – বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সহায়তার জন্য সরকার ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের মতো উন্নয়নশীল রাজ্যে সীমিত সম্পদ, ত্রাণ ও পুনর্গঠন, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসন কাঠামো, ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রতিকূল। পশ্চিমবঙ্গের মত ছোট রাজ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যের মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে।
👉 একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে পর্যালোচনা
ভূমিকা
একটি পুকুর মিষ্টি জলের বাস্তুতন্ত্র যা অবস্থানকারী সমস্ত জীবজন্তুর খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জীবজ ও অজীবজ উপাদান তাদের আন্ত সম্পর্কের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্র গঠন করে। এছাড়াও ওই বাস্তুতন্ত্রের বাইরে কিছু জিবেরাও বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক সাধন করে, যা একটি জটিল আন্ত সম্পর্ক সৃষ্টি করে। একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের প্রধান তিন প্রকারের যে দেখা যায়, যথা –
১) উৎপাদক – এই ধরনের জীবেরা সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়া, যারা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং লিপিড দেহের সঞ্চয় করে রাখে। যা পরবর্তী ট্রাফিক লেভেল এর জীবেদের খাদ্য যোগান দেয়।
২) খাদক – এই শ্রেণীর জীবেরা খাদ্যের ব্যাপারে অন্য জীবের উপর নির্ভরশীল। উৎপাদক থেকে খাদ্য সংগ্রহকারী জীবেদের প্রাথমিক খাদক, প্রাথমিক খাদক থেকে খাদ্য সংগ্রহকারী জীবদের গৌণ খাদক এবং গৌণ খাদক থেকে খাদ্য সংগ্রহকারী জীবদের প্রগৌণ খাদক বলে।
৩) বিয়োজক – উৎপাদক ও খাদক শ্রেণীর প্রাণীরা মৃত হয়ে গেলে তাদের দেহাংশ যে সমস্ত জিভ দ্বারা পচে গলে অজীবন উপাদানে পরিণত হয়, ও পরিবেশে ফিরে আসে তাদের বিয়োগ বলে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য
- পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম নথিভুক্ত করা।
- পুকুরের জল দূষণ হওয়ার কারণ গুলি উপবদ্ধ করা।
- দূষণ প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণ করা।
ফলাফল
A) পুকুরের বাস্তুতন্ত্র পর্যালোচনা করে যে সমস্ত উৎপাদক পাওয়া গেছে – ম্যাক্রোফোইটস বা বৃহৎ মুলযুক্ত উদ্ভিদ। এবং ফাইটোপ্লাংটন্স বা যে সমস্ত জীবেরা ক্ষুদ্র ও ভাসমান বা অর্ধ নিমজ্জিত।
B) পুকুরটির বাস্তুতন্ত্র পর্যালোচনা করে যে সমস্ত খাদক পাওয়া গেছে তারা হলো – প্রাথমিক খাদক যেমন পতঙ্গ, লার্ভা, মোলাস্কা ইত্যাদি। গৌণ খাদক যেমন বিভিন্ন ধরনের মাছ। রঘুনা খাদক যেমন বিভিন্ন ধরনের সাপ ও পাখি। পাখি বলতে এখানে পানকৌড়ি, ও মাছরাঙ্গা, বক, ইত্যাদি।
C) পুকুরটির বাস্তুতন্ত্রের যে সমস্ত বিয়োজক পাওয়া গেছে তারা হলো বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক।এছাড়াও কিছু ব্যাকটেরিয়া ।
সমস্যা
পুকুরটির বাস্তুতন্ত্র পর্যালোচনা করে লক্ষ্য করা গেল যে, পুকুরে গবাদি পশুর স্নান করানো হচ্ছে, এছাড়াও জামা কাপড় কাঁচা-ধোয়া হচ্ছে, বাসন ধোয়া হচ্ছে ইত্যাদ।
সমাধান
- পুকুরের জলের অপচয় রোধ করতে যথাসম্ভব সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
- গবাদি পশুদের সরাসরি স্নান করানো যাবে না পুকুরেতে।
- সাবান ও অন্যান্য ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল যাতে পুকুরে না পড়ে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
- পুকুরের জলে যাতে বাড়ির কোন বজ্র পদার্থ না ফেলা হয় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
সুতরাং এই প্রকল্প থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, যে পুকুরটি যথেষ্ট ভাবে জীব বৈচিত্র দ্বারা পরিপূর্ণ সেই এলাকার মানুষদের পুকুরটির বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষদেরকে বসে আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উপরে উক্ত পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন। পশ্চিমবঙ্গে আগামী কয়েক দশক ধরে কি কি দুর্যোগ, কোথায় কোথায় এসেছে এবং তার ফলে কি কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে।