sources of water pollution | জল দূষণের উৎস | জল বাহিত রোগ |

sources of water pollution – এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন জল দূষণের উৎস গুলি কি কি, জল দূষণের ফলে কি কি রোগ হয়, জল দূষণের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা সমূহ।

sources of water pollution
sources of water pollution

👉 জল দূষণের উৎস ( sources of water pollution )

শিল্প কারখানা থেকে জল দূষণ – পেট্রোর রাসায়নিক শিল্পে, পলিথিন, প্লাস্টিক শিল্পে, জ্বালানি শিল্পে, খনিজ তেল পরিশোধন শিল্পে, বিভিন্ন রকম যানবাহন নির্মাণ, ছোট বা মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের প্রচুর পরিমাণে দূষিত রাসায়নিক পদার্থ যেমন – অ্যামোনিয়া, ক্লোরিন, ফেনোল, সায়ানাইড, বিভিন্ন ধাতু, জিংক, পারদ, সিসা, ক্রোমিয়াম ঘটিত দূষক নালা, নর্দমা দিয়ে নদী বা সমুদ্রের জলে মিশে জল দূষিত করছে।

গৃহস্থালী থেকে জল দূষণ – গ্রাম ও শহর এলাকার বিভিন্ন আবর্জনা ও বজ্র পদার্থ যেমন- গৃহস্থলীর দৈনন্দিন রান্না খাবারের টুকরো, দূষিত বস্তু, শৌচাগারের মল-মূত্র, সাবান, ডিটারজেন্ট, ফিনাইল প্রভৃতি নিকাশি নালার মাধ্যমে ভূগর্ভের জলে, নদীতে, জলাশয় পরে জলকে দূষিত করে তোলে। এছাড়াও বিভিন্ন খাটাল, পশু শালা, বড় বাজার, হাসপাতালে ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন বর্জ্য জলকে দূষিত করে।

কৃষি ক্ষেত্র থেকে জল দূষণ – চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছা নাশক ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির জলে ধুয়ে এই সমস্ত বিষাক্ত রাসায়নিক ভূগর্ভে জলে, জলাশয়ে, নদীতে মিশে জল দূষিত করে। এই সাড়ে থাকা নাইট্রেটের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। শিশুদের মাথায় রক্ত চলাচলে অসুবিধা ঘটায়।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে জল দূষণ – পারমাণবিক চুল্লি, চিকিৎসা কেন্দ্র বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো ব্যবহারের পর সমুদ্রে বা নদীতে ফেলা হয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয় পদার্থ জলে মিশে জল দূষণ ঘটায়।

খনিজ তেল থেকে জল দূষণ – দুর্ঘটনাগ্রস্থ তেলবাহী জাহাজ থেকে অথবা সমুদ্রে অবস্থিত তেলের খনির তেল সমুদ্রে মিশে জল দূষণ ঘটায়।

তাপীয় দূষণ – তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কারখানায় ব্যবহৃত উষ্ণ দূষিত বর্জ্য জল সরাসরি জলাশয়ে, নদীতে মিশে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও জল দূষণ ঘটায়।

বায়ু দূষণের কারণ জল দূষণ – কলকারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি জমা হয়। বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টির জলের সঙ্গে এই দূষিত এসিড মিশে ভূপৃষ্ঠের ও ভূগর্ভের জলকে দূষিত করে।

আর্সেনিক দূষনের ফলে জল দূষণ – মাটির নিচের স্তর থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিরিক্ত জল তুলে নেওয়ার ফলে মাটির নিচের ফাঁকা জায়গায় আর্সেনিক বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষাক্ত ধাতব যৌগ তৈরি করে। এই যৌগ জলে মিশিয়ে নলকূপে জলের মাধ্যমে পানীয় জলে মিশে যায়। এইভাবে জলে ফ্লুওরিন ক্লোরিন অতিরিক্ত পরিমাণে থাকলেও জল দূষিত হয়।

👉 জল বাহিত রোগঃ

👨‍⚕️কলেরা রোগ

আমাদের পানীয় প্রধান উপাদান হল জল। অনেক সময় ওইসব জল থেকেই আমাদের শরীরে ঢুকতে পারে কলেরা ও টাইফয়েড এর মত বিভিন্ন রোগের জীবাণু। তার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি। বাংলায় ১৮১৭ সালে কলেরা মহামারির আকার নেয়। বঙ্গোপসাগরে চলাচল করা ব্রিটিশ জাহাজের মাধ্যমে বাংলা থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পৌঁছে যায় এই মহামারি। তারপর এই মহামারী সেখান থেকে পারস্য, মধ্য এশিয়া , দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হতে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পৌঁছে যায়।

১৮২৭ সালে ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা, কলকাতা আর তার আশেপাশে অঞ্চল থেকে দ্বিতীয় কলেরা মহামারীর সূচনা হয়। এরপর এই মহামারী গঙ্গায় উজান বেয়ে লাহোর আর পাঞ্জাবে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে উটের কারাভানের পথ ধরে কাবুল, আফগানিস্তান, বুখারা হয়ে রাশিয়ায় ছড়িয়ে যায় এই মহামারী। ১৮৩৫ সালের মধ্যে এই মহামারী আমেরিকা আর ইউরোপে পৌঁছে যায়।

কলেরাই আক্রান্ত ব্যক্তির বারে বারে বমি আর মলত্যাগ, মলের রং চাল ধোয়া জলের মত। মলে কোন দুর্গন্ধ থাকে না। রোগীর শরীর থেকে দিনে ১০ থেকে ১৫ লিটারের মতো জল বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে এতটা জল আর লবণ বেরিয়ে যাওয়ার কারণে হাত পায়ে ছুচ ফোটানোর মতো অনুভূতি হয়। এর থেকেই বিসুচিকার সুচিক কথার উৎপত্তি।

এই রোগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি শিশু আর বয়স্কদের, যাদের শরীরে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার ধকলটা নিতে পারেনা। বমি, পায়খানা, জল তেষ্টা, পেট ব্যথা, অবসন্ন বোধ করা, পায়ের চামড়ার শীতলতা বা চামড়া কুচকে যাওয়া, রোগীর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়া, জ্ঞান হারানো আর সব শেষে মৃত্যু ঘটতো। পুরো ব্যাপারটা ঘটতে সময় লাগে খুবই অল্প। কখনো বা মাত্রই ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা।

পানীয় জলের বিভিন্ন উৎসে নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ এসে মেশে। তেমনি আমাদের অসাবধানতার জন্য নানা রোগের জীবাণু অনেক সময় পানীয় জলে এসে মেশে আর সেই জলের মাধ্যমে ছড়ায় কলারের মতো বড় বড় রোগ। জলের মাধ্যমে যে সব রোগ ছড়ায় তারা হলো জল বাহিত রোগ।

কলেরা রোগের প্রতিকার – জল পান করে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া জলের ঘাটতি পূরণ করা। জল পান করার সময় জলকে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে , এরপর জল একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলে তার সঙ্গে ORS বা ওরাল রেহাইড্রেশন সল্ট মিশিয়ে জল পান করতে হবে। এবং খুব শীঘ্রই কোন নিকটবর্তী সরকারি হসপিটাল অথবা ডাক্তারখানায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

👨‍⚕️ টাইফয়েড –

টাইফয়েডও একটি জল বাহিত রোগ। যা দূষিত জল পান করার ফলে অথবা দূষিত কোন পানীয় জলের খাবার খাওয়ার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। টাইফয়েড বিশেষত এক ধরনের জ্বর। এই রোগে মানুষের শরীর অনেকটাই জল শূন্য হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কাপনি দিয়ে জ্বর আসে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। খাওয়া দাওয়াতে মন লাগে না। কখনো কখনো বমি বমি ভাব লাগে, এবং বমিও হয়ে থাকে।

টাইফয়েডের প্রতিকার – সব সময় পরিষ্কার এবং পরিশুদ্ধ জল পান করতে হবে। জলের পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জল রেখার পাত্রে সব সময় ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। তিন থেকে চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে, শীঘ্রই কোনো সরকারি হসপিটালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। যদি টাইফয়েডের কোন উপসর্গ থাকে তাহলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।

👨‍⚕️ ডায়রিয়া

এটিও এক ধরনের জল বাহিত রোগ। যা বিশেষত কলেরারি মত। কলেরাতে যেমন পায়খানা বমি দুটোই হয়ে থাকে, এখানে ডায়রিয়াতে কিন্তু তা হয় না। ডায়রিয়াতে শুধুমাত্র তরল পায়খানা হয়ে থাকে। এই তরল পায়খানা দিনে চার থেকে অধিক বার হয়ে থাকে। এর ফলে পেটে খুব ব্যথা অনুভব হয়। এবং যখনই কোন কিছু খাওয়া হবে তখনই যেন মনে হবে মলত্যাগ হবে। আর ডায়রিয়া রোগে যে মলত্যাগ হয় তা কিন্তু জলের মতো নয়। এর ফলে শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, মাথা ধরে রাখতে পারে।

ডায়রিয়া প্রতিকার – পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে। যখন পেটে ব্যথা সমেত দিনে তিনবার বা তার অধিক গারো ডাল এর মত পায়খানা হলে। শীঘ্রই কোন ডাক্তার-খানা বা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। বেশিক্ষণ ধরে প্লাস্টিকের বোতলে রাখা জল খাওয়া চলবে না।

👉 জল দূষণের প্রতিরোধ ( ways of prevention of water pollution )

  • জল দূষণ আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে জলের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো এবং বেশি পরিমাণে পুন ব্যবহার করলে তবে সারা পৃথিবীব্যাপী তীব্র জল সংকট মেটানো যেতে পারে।
  • জলাশয় বা নদী বা সমুদ্রের জলে নোংরা আবর্জনা সরাসরি ফেলা যাবে না। গরু বা মহিষ অথবা অন্যান্য পশুর জলে স্নান করানো যাবে না।
  • পুকুরের জলে কাপড় কাচা বন্ধ করতে হবে সঙ্গে খাবারের থালা-বাসন ধোয়াও বন্ধ করতে হবে।
  • চাষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শহর এবং কলকারখানার দূষিত ও বজ্র জল শোধন করে তবেই নদীবা সমুদ্রে ফেলা উচিত।
  • ব্যবহার করা জল পরিশোধন করে পুন ব্যবহার করতে হবে। ইজরায়েলে ব্যবহৃত জলের ৩০ শতাংশ ছেচের কাজে পুন ব্যবহৃত হয়।
  • তাপ বিদ্যুৎ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য গরম জল ঠান্ডা করে তবেই নদী বা সমুদ্রে ফেলা উচিত।
  • বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল এবং রাসায়নিক এর মাধ্যমে সমুদ্রে ভাসমান তেলের দূষণ দূর করা যায়।
  • নিরাপদ পানীয় জলের জন্য নলকূপের জলের দূষণের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে বিশুদ্ধ জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *